প্রকাশের সময় : ঢাকা, মঙ্গলবার ১৮ পৌষ ১৪৩০ বঙ্গাব্দ,০২ জানুয়ারি ২০২৪খ্রিস্টাব্দ,১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৫ হিজরি,আপডেট : ০৫:৫০:৩৫ পিএম.
মোহাম্মদ সাইদ ( স্টাফ রিপোর্টার) : ঢাকার কেরানীগঞ্জে আন্তঃজেলা ডাকাত চক্রের ১০ সদস্যকে আটক করেছে কেরানীগঞ্জ মডেল থানা পুলিশ।
কেরাণীগঞ্জে আবাসিক এলাকায় দুর্ধর্ষ ডাকাত মাস্টার গ্রুপের ইলিয়াস মাস্টার গ্রুপের ডাকাতিতে অতিষ্ট এলাকাবাসী। শীতের তীব্রতা ও কুয়াশা বাড়ার সাথে সাথে
এক দল ডাকাত কেরাণীগঞ্জ মডেল থানাধীন বলসতা ও অভ্রখোলা এবং দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানাধীন বাস্তা ইউনিয়নের বিভিন্ন নির্জন এলাকায় অবস্থিত কয়েকটি বাড়িতে সিরিজ ডাকাতি করে আসছিলো।
আশপাশের এলাকায় সুযোগ পেলেই ডাকাতি করত চক্রটি। ডাকাত চক্রটির ১০ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
মঙ্গলবার (২ জানুয়ারী) দুপুরে ঢাকা জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান পুলিশ সুপার আসাদুজ্জামান। তিনি জানান,কেরাণীগঞ্জ দুর্ধর্ষ ডাকাত মাস্টার গ্রুপের ইলিয়াস মাস্টার সহ ১০ ডাকাত গ্রেফতার ও ০৪ টি ডাকাতি মামলার রহস্য উদঘাটন এবং লুষ্ঠিত বিভিন্ন স্বর্ণালংকার ও দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করেছে পুলিশ। সবগুলো ডাকাতির ঘটনায় ডাকাতরা খোলা বিল/চকের পার্শ্বে অবস্থিত প্রায় একই ধরনের বাড়ীকে টার্গেট করে এবং একই পদ্ধতিতে ডাকাতি করেছে।
সশস্ত্র এই ডাকাতদল গভীর রাতে বাড়ীর গ্রিল কেটে ঢুকে পড়ে এবং দেশীয় অস্ত্রের মুখে উক্ত বাড়ীর সকলকে জিম্মি করে ফেলে। বাড়ীর পুরুষ সদস্যদের হাত-পা, চোখ-মুখ বেধে ফেলে এবং মহিলাদের চোখ-মুখ বেধে ফেলে। তারপর ডাকাতদলের অন্য সদস্যরা মুহুর্তের মধ্যে বাড়ীর আলমারি শো- কেজসহ সবকিছু ভেঙে তছনছ করে মূল্যবান স্বর্ণালংকার, নগদ টাকা ও দামী কাপড়-চোপড় এমনকি টেলিভিশন পর্যন্ত খুলে নিয়ে যায়।
ডাকাতিতে নেতৃত্ব দেয় ডাকাত দলের সর্দার ইলিয়াস যাকে ডাকাত দলের সদস্যরা ‘মাস্টার’বলে ডাকে।
তিনি (পুলিশ সুপার) আরও জানান,গত ১৮/১২/২৩ খ্রিঃ তারিখে কেরাণীগঞ্জ মডেল থানাধীন শাক্তা ইউনিয়নের বলসতা জনৈক আরিফ হোসেন( আরব আলী) বসতঘরে ডাকাতির ঘটনার সুত্র ধরে মামলা রুজুর সাথে সাথে জনাব আসাদুজ্জামান পিপিএম (বার), পুলিশ সুপার, ঢাকা মহোদয় তাৎক্ষণিকভাবে ভয়ংকর এই আন্তঃজেলা ডাকাত চক্রকে দ্রুত গ্রেফতারের জন্য বিভিন্ন দিক-নির্দেশনা প্রদান করেন।
এরই ধারাবাহিকতায় জনাব আমিনুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, ক্রাইম এন্ড অপস্ (দক্ষিণ) এর সার্বিক তত্ত্বাবধানে এবং জনাব মোঃ শাহাবুদ্দিন কবীর বিপিএম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, কেরাণীগঞ্জ সার্কেল এর নেতৃত্বে একটি চৌকস তদন্ত দল দুর্ধর্ষ ডাকাত মাস্টার গ্রুপকে গ্রেফতারের জন্য কাজ শুরু করে।
একপর্যায়ে তদন্ত দল তথ্য-প্রযুক্তির মাধ্যমে ঘটনায় জড়িত দুর্ধর্ষ এই ডাকাতচক্রকে সনাক্ত করতে সক্ষম হয়। পরবর্তীতে জনাব শাহাবুদ্দিন কবীর বিপিএম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, কেরাণীগঞ্জ সার্কেল এর সরাসরি তত্ত্বাবধানে ও অফিসার ইনচার্জ, কেরাণীগঞ্জ মডেল থানা ও অফিসার ইনচার্জ, দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানার সহযোগিতায় এসআই (নিঃ) অলক কুমার দে এবং এসআই (নিঃ) হিরন কুমার বিশ্বাস এর নেতৃত্বে পৃথক দুটি আভিযানিক দল কেরাণীগঞ্জ, সাভার, নারায়নগঞ্জ, মাদারীপুর ও ডিএমপির বিভিন্ন এলাকায় গত ২৪ ঘন্টায় ধারাবাহিক অভিযান পরিচালনা করে ডাকাত দলের সর্দার “মাস্টার” বলে পরিচিত কুখ্যাত ডাকাত ইলিয়াস (৪৮) ও ‘মাস্টার’-কে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।
এছাড়া ডাকাত দলের আরো ৯ সদস্য ১। শাহিন (২৮) ও ভাগিনা, ২। সোহেল (৪০), ৩। বাবুল (২৪), ৪। আসাদ (৪৩), ৫। রাশেদুল ② বিটু (৩০), ৬। ওহাব ও নানা(৬২), ৭। সামাদ (৫০), ৮। দীপু (২০), ৯। মকবুল ও মঙ্গল (২৭) সহ মোট ১০ জন ডাকাতকে গেফতার করতে সক্ষম হয়।
অভিযানকালে ডাকাতদের হেফাজত থেকে ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত দেশীয় অস্ত্র, লুন্ঠিত স্বর্ণালংকার, নগদ টাকা ও অন্যান্য মালামাল উদ্ধার করা হয়। গ্রেফতারকৃত ডাকাতদলের সদস্যরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে উপরে উল্লেখিত ডাকাতির ঘটনাগুলোতে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে।
ডাকাতরা জিজ্ঞাসাবাদে জানায় যে, তারা পুলিশের চোখকে ফাকি দেওয়ার জন্য মাছ ধরার জাল সাথে রাখে এবং কোথাও পুলিশ টহলটিম/চেকপোস্টে ধরা পড়লে তারা পেশায় জেলে এবং রাত্রে মাছ ধরতে যাচ্ছে বলে জানায়। ডাকাতদলের সদস্যদের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে মর্মে তথ্য পাওয়া যায়। ডাকাত দলের পলাতক অন্যান্য সদস্যদের গ্রেফতার ও লুন্ঠিত অন্যান্য মালামাল উদ্ধার অভিযান অব্যাহত আছে।
প্রেস ব্রিফিং শেষে পুলিশ সুপার (আসাদুজ্জামান )কার্যালয়ে উপস্হিত সকল সাংবাদিকদের নিয়ে ইংরেজি নববর্ষ-২০২৪ শুভেচ্ছা জানিয়ে কেক কাটেন।