সুমন কুমার বুলেট নওগাঁ জেলা প্রতিনিধি:
নওগাঁয় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে প্রকাশ্য অস্ত্রের মহড়া দিয়ে এক ঠিকাদারকে কুপিয়ে জখমের ঘটনায় অভিযুক্ত মোশাররফ হোসেন শান্ত (৩২)কে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। সোমবার (১৫ এপ্রিল) দুপুর আড়াইটার দিকে শহরের বালুডাঙ্গা বাসস্টান্ড এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। অভিযুক্ত মোশারফ হোসেন শান্ত শহরের চকগোবিন্দ এলাকার আক্কাস আলীর ছেলে।
এর আগে রোববার (১৪ এপ্রিল) রাত ১০টার দিকে বালুডাঙ্গা বাসস্টান্ড এলাকায় প্রকাশ্য অস্ত্রের মহড়াসহ সাজ্জাদ হোসেন (৩৫) নামে পল্লী বিদ্যুতের এক ঠিকাদারকে কুপিয়ে জখম করার অভিযোগ উঠে মোশারফ হোসেন শান্ত ও তাঁর অনুসারীদের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় পরের দিন সোমবার (১৫ এপ্রিল) বাদী হয়ে নওগাঁ সদর মডেল থানায় হত্যা চেষ্টা মামলা দায়ের করেন ভুক্তভোগী সাজ্জাদ। এদিকে রবিবার রাতেই শান্তর প্রকাশ্য অস্ত্রের মহড়াসহ ঠিকাদারকে কুপিয়ে জখমের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে ছড়িয়ে পড়ে।
ছড়িয়ে পড়া ওই ভিডিওতে দেখা যায়, মোশারফ হোসেন শান্ত নামে এক যুবক ১০-১২ জনকে সঙ্গে নিয়ে ধারালো অস্ত্র হাতে ঠিকাদার সাজ্জাদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে ধারালো হাঁসুয়া দিয়ে সাজ্জাদের মাথায় কোপ দেয় শান্ত। ওই মুহুর্তে গুরুত্বর জখম বাবাকে বাঁচাতে ছুটে যান সাজ্জাদের ছেলে হৃদয়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে হৃদয়কেও মারপিট করে শান্তর অনুসারীরা। পুরো এ ঘটনাটি ঘটে ওই সড়কে চলাচলকারী শত শত মানুষের উপস্থিতিতেই।
প্রকাশ্য অস্ত্রের মহড়ার এ ঘটনার পর সোমবার সকাল থেকেই শহরজুড়ে আতঙ্ক বিরাজ করছিলো। ঘটনার পর গা ঢাকা দিয়েছিলো মোশাররফ হোসেন শান্ত ও তাঁর অনুসারীরা। তাঁদের আটকে রাত থেকেই সাড়াশি অভিযানে নামে থানা পুলিশ। সর্বশেষ দুপুরে পুলিশের অভিযানে শান্তকে গ্রেপ্তার করা হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বালুডাঙ্গা বাসস্টান্ড এলাকার স্থানীয় বেশ কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, বাসস্টান্ডে সোহরাওয়ার্দী নামে একটি মুদিখানার দোকানীকে রাতে আকস্মিক কল দিয়ে হাত পা ভেঙে ফেলার হুমকি দেয় শান্ত। এর কিছুক্ষণ পর ওই দোকানে গিয়ে সোহরাওয়ার্দীকে মারপিট শুরু করেন শান্ত ও তাঁর অনুসারীরা। পুরো এ ঘটনাটির প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন ঠিকাদার সাজ্জাদ। ওই মুহুর্তে বাঁধা দিতে গেলে সাজ্জাদের উপর চড়াও হয় শান্ত ও তাঁর অনুসারীরা। এরপর সেখান থেকে কিছুটা দূরে গিয়ে তাঁরা শুরু করে অস্ত্রের মহড়া। হামলা করা হয় সাজ্জাদ ও তাঁর ছেলের উপর।
ঘটনার লোমহর্ষক বর্ণণায় ঠিকাদার সাজ্জাদ হোসেন বলেন, নববর্ষের দিন স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে ঘুরাঘুরি শেষে বাড়িতে ফিরছিলাম। ফেরার পথে স্ত্রীকে পাঠিয়ে দিয়ে ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে বাসস্টান্ডে নেমে যাই। পথে সাজ্জাদের অন্যায়ের প্রতিবাদ করলে সে আমার পথরোধ করে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে। শান্তর সাথে থাকা ১০-১২ জনের প্রত্যেকের হাতেই ধারালো অস্ত্র ছিলো। চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তাঁরা আমার শরীরে বিভিন্ন স্থানে কোপাতে থাকে।
ভুক্তভোগী সাজ্জাদ হোসেন আরও বলেন, আমাকে বাঁচাতে এলে আমার ছেলেকেও তাঁরা বেদম মারপিট করেছে। অনেক আকুতি মিনতী করেও লাভ হয়নি। শান্ত বাহিনীর অত্যাচারে আমাদের পুরো বাসস্টান্ড এলাকায় আমরা অতিষ্ট। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের ঘনিষ্ঠজন হওয়ায় শান্ত কাওকেই তোয়াক্কা করে না। এমপি-মন্ত্রীদের সাথেও শান্তর ঘনিষ্ঠতা রয়েছে। তাই পুলিশও শান্তর বেপরোয়া চলাফেরা দেখেও নীরব ভূমিকায় থাকে। এ ঘটনায় থানায় মামলা করলে আমাকে হত্যা করবে বলে হুমকি দিয়েছিলো শান্ত বাহিনীর সন্ত্রাসীরা। এরপরেও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মামলা করেছি। আমি ন্যায় বিচার চাই।
এবিষয়ে জানতে চাইলে নওগাঁ সদর মডেল থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ জাহিদুল হক বলেন, সংবাদটি পাওয়ার পর রাতেই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছিলো। এ ঘটনায় মোশারফ হোসেন শান্তকে প্রধান আসামী করে মোট ৭ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন ভুক্তভোগী ঠিকাদার। এরপরই ভিডিও দেখে অস্ত্রধারীদের চিহ্নিত করাসহ গ্রেপ্তারে মাঠে নামে পুলিশ। দুপুর আড়াইটার দিকে প্রধান অভিযুক্ত শান্তকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত বাকীদের গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে।