সুমন কুমার বুলেট নওগাঁ জেলা প্রতিনিধিঃ
দেশের উত্তরাঞ্চলের খাদ্যভাণ্ডার বলে পরিচিত নওগাঁয় কয়েক দফায় মসলা জাতীয় পন্য পেঁয়াজ এবং রসুনের দাম উঠা-নামা করেছে। এতে বেকায়দায় পড়েছেন কৃষক ও ব্যবসায়িরা। বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ বাড়ায় পাইকারিতে গত কয়েকদিনে কেজিতে ১০-১৫ টাকা কমেছে। পেঁয়াজের দাম কমায় ক্রেতাদের মাঝে স্বস্তি ফিরেছে। অপরদিকে প্রতিকেজিতে রসুনের দাম বেড়েছে ১৫ টাকা। আমদানির খবরে পেঁয়াজের দামের দরপতন হচ্ছে বলে জানা গেছে।
নওগাঁ পৌর পাইকারি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গত কয়েকদিনে পেঁয়াজের দাম প্রতি কেজিতে ১০-১৫ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে প্রকারভেদে ৩৫-৪০ টাকা। আগে আগে ছিল ৫০-৫৬ টাকা। অপরদিকে ১৫ টাকা বেড়ে রসুন বিক্রি হচ্ছে ৯০-৯৫ টাকা। যা আগে ছিল ৭০-৮০ টাকা। চাষীদের উৎপাদিত দেশী পেঁয়াজে হাট-বাজার সয়লাব। ইতোমধ্যে আর কয়েকদিনের মধ্যে দেশের কয়েকটি বন্দর দিয়ে আমদানিতকৃত পেঁয়াজ আসার অপেক্ষা। এই সংবাদে কমেছে পেঁয়াজের দাম। এদিকে, পেঁয়াজ সংরক্ষণের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় অনেক কৃষক কম দামে এবং লোকসান করে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। পেঁয়াজ আমদানি হলে আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হতে হবে চাষীদের।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এ বছরে পেঁয়াজের আবাদ ধরা হয়েছে ৪ হাজার ৮৯০ হেক্টর। যা থেকে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে ৬৩ হাজার ৫৯০ মেট্রিক টন। গত বছর ৪ হাজার ৫৫০ হেক্টর জমি থেকে পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছিল ৫৭ হাজার ২৫৭ মেট্রিক টন। এ বছর রসুনের আবাদের পরিমাণ ৭৮০ হেক্টর ধরা হয়। যা থেকে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৭ হাজার ২০ মেট্রিক টন। এছাড়া গত বছর ৮২০ হেক্টর জমি থেকে রসুনের উৎপাদন হয়েছিল ৭ হাজার ৬২৬ মেট্রিক টন।
পেঁয়াজ চাষী আফাজ বলেন- গত কয়েকদিন আগেও ২ হাজার (৫০ টাকা কেজি) টাকা মণ হিসেবে পেঁয়াজ বিক্রি করেছিলাম। সেই পেঁয়াজ এখন ৩৬-৩৮ টাকা কেজি হিসেবে দাম বলছেন ব্যবসায়িরা। হাটে ১০ মণ পেঁয়াজ বিক্রি করার জন্য নিয়ে আসছিলাম। ভাল দাম না পাওয়ায় বাড়িতে ফেরত নিয়ে যেতে হচ্ছে। আরেক কৃষক মুক্তার হোসেন বলেন- ১৫ কাঠা জমিতে পেয়াজ চাষ করেছিলাম। এবছর পেঁয়াজের আবাদে বিঘাপ্রতি ১৬-১৮ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। আবহাওয়ায় অনকুলে না থাকায় ফলন কম হয়েছে। বাজারে দাম কম শুনছি। আবার ভারত থেকেও পেঁয়াজ আসার কথা শুনছি। আমরা কৃষকরা আসলে মাথায় হাত দেয়া ছাড়া কোন উপায় দেখছি না। ব্যবসায়িরা লাভবান হলেও কৃষকরা সবসময় লোকসানে মধ্যে থাকে।
ব্যবসায়িরা বলছেন- স্থানীয় ভাবে উৎপাদিত পেঁয়াজ বাজারে আসতে শুরু করেছে। এছাড়া পাশের জেলা উত্তরের বড় মোকাম পাবনা ও নাটোর জেলা থেকে ব্যবসায়িরা পেঁয়াজ নিয়ে আসছে। একারণে বাজারে পেঁয়াজের দাম কমেছে। বাজারে ক্রেতা সংকট হওয়ায় বেচাকেনা অনেকে টা কমেছে। তবে হঠাৎ করে পেঁয়াজের দাম কমায় লোকসান করে বিক্রি করতে হচ্ছে বলে জানান ব্যবসায়িরা। নওগাঁ পৌর পাইকারি বাজারে মেসার্স লক্ষ্মী ভান্ডার এর স্বত্ত্বাধিকারী সুকুমার বলেন- গত ২-৩ দিন থেকে পেঁয়াজের দাম কমেছে। প্রতিকেজিতে ৫-৭ টাকা লোকসান করে বিক্রি করতে হচ্ছে। বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ বাড়ায় দাম কমেছে। অপরদিকে স্থানীয় ভাবে উৎপাদিত পেঁয়াজও বাজারে আসতে শুরু করেছে। আগামীতে পেঁয়াজের দাম আরো কমতে পারে। এছাড়া রসুন বিক্রি হচ্ছে ৮০-৯০ টাকা কেজি।