সুমন কুমার বুলেট নওগাঁ জেলা প্রতিনিধি :
দিনমজুর ব্রোজেন্দ্রনাথ প্রামাণিক (৫২)। বাড়ি নওগাঁর মান্দা উপজেলার মদনচক গ্রামে। অভাবের সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরায় অবস্থা। জীবিকা নির্বাহের জন্য মহাদেবপুর উপজেলা সদরে ট্রাকলোড ও আনলোডের শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন। মজুরি চাইতে গিয়ে মারপিটের শিকার হয়েছেন ব্রোজেন্দ্রনাথ ও তার ছেলে টগর প্রামাণিক। শুত্রবার বিকেলে এ ঘটনায় তিনি বাদি হয়ে থানায় এজাহার দায়ের করেছেন। এতে উপজেলা সদরের খাদ্যগুদাম এলাকার মৃত মোদাচ্ছের আলীর ছেলে সাজেদুর রহমার সাজুর নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ৩-৪ জনকে আসামি করা হয়েছে। এজাহার প্রাপ্তির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন থানার ডিউটি অফিসারের দায়িত্বে থাকা এসআই আশিস সরকার। শ্রমিক নির্যাতন নিয়ে স্থানীয় শ্রমিকদের মাঝে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। যে কোনো সময় বিক্ষুদ্ধ শ্রমিকরা অভিযুক্ত সাজুকে গণপিটুনি দিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। জড়িতদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় কয়েকটি শ্রমিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ৬ সেপ্টেম্বর সাজুর ট্রাক লোড-আনলোডের কাজ করে শ্রমিকরা। এদিন তীব্র তাবদাহে শ্রমিকরা কিছু কাজ বাকি রাখে এবং তা পরবর্তীতে শেষ করার কথা জানান। এরপর সন্ধ্যা সাড়ে ৭ টায় সদর ইউনিয়নের মহাদেবপুর-মাতাজিহাট সড়কের হায়দ্রাবাদ এলাকার আবেজান অটোমেটিক রাইস মিলে মজুরির টাকা চাইতে গেলে সাজু তার ব্যক্তিগত অফিসে ব্রোজেন্দ্রনাথ ও তার ছেলে টগরকে ডেকে নেয়। এরপর সাজু ও তার ৩-৪ জন সহযোগী লাঠি দিয়ে তাদের বেদম প্রহার করে। একপর্যায়ে প্রধান অভিযুক্ত সাজুর হতে থাকা লাঠি দিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে মাথায় আঘাত করলে ব্রোজেন্দ্রনাথ তার বাম হাত দ্বারা প্রতিহত করলে গুরুত্বর জখম প্রাপ্ত হন। তাদের ডাক-চিৎকারে ঘটনাস্থলে কয়েক জন উপস্থিত হলে ব্রোজেন্দ্রনাথ ও তার ছেলেকে হত্যার হুমকি দিয়ে ওই অফিস থেকে ধাক্কা মেরে বের করে দেয়। পরে স্থানীয়দের সহায়তায় তাদের উদ্ধার করে উপেজলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক টগরকে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে ছাড়পত্র প্রদান করেন। সেখানে গত ৬-৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ভর্তি থেকে চিকিৎসা নেন ব্রোজেন্দ্রনাথ। অভিযোগ রয়েছে- স্থানীয় প্রভাবশালীদের সহায়তায় সাজু তার চাল কলে টর্চার সেল পরিচালনা করছে। বিভিন্ন সময় সেখানে শ্রমিকদের ওপর নির্যাতন চালানো হয়। এছাড়াও আইনের তোয়াক্কা না করেই শিশুদের শ্রমিক হিসেবে কমমূল্যে কাজ করানো হচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। বিষয়টি নিশ্চত করেছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ৪-৫ জন শ্রমিক। অভিযুক্ত সাজেদুর রহমান সাজুর সাথে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি প্রতিবেদকের ফোন রিসিভ করেননি। জানতে চাইলে থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোজাফফর হোসেন জানান, তদন্ত করে দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থ্যা গ্রহণ করবেন।#