,রাণীনগর (নওগাঁ) : নওগাঁর আত্রাই উপজেলা
প্রশাসনের নিরব ভূমিকায় পুকুর খননের যেন ধুম পরেছে। শীত মৌসুমের শুরুতেই ভূমি ও ফসলি জমি সুরক্ষা আইন উপেক্ষা করে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় প্রায় ৫০বিঘা ফসলি জমিতে চলছে ভেকু মেশিন দিয়ে পুকুর খনন। এতে প্রতি বছরেই আবাদী জমি কমে যাওয়ায় খাদ্য শস্য উ’পাদন হ্রাস পাচ্ছে। অভিযোগ ওঠেছে,পুকুর খননে ভূমির শ্রেনী পরিবর্তনসহ নানান জটিলতায় জমির মালিকদের অনাগ্রহ থাকলেও অসাধু ভেকু মেশিন ব্যবসায়ীরা সবকিছু ম্যানেজ করার
দায়িত্ব নিয়ে জমির মালিকদের পুকুর খননে উদ্বুদ্ধ করছেন। কৃষি অফিসের তথ্য মতে,গত পাঁচ বছরে এই উপজেলায় প্রায় ১৫০বিঘা আবাদী জমি কমে গেছে। কৃষি কর্মকর্তা বলছেন,ফসলি জমি কৃষকের ব্যক্তি মালিকানা সম্পত্তি। নিরু’সাহিত করা ছাড়া পুকুর খনন করলে আমরা বাধা দিতে বা আইন প্রয়োগ
করতে পারিনা। অবশ্য দ্রুত পুকুরখননকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছেন সহকারী কমিশনার (ভূমি)।
আত্রাই উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বড় বিশা মাঠে,বাঁকা মাঠে ও নাখবেড়ী মাঠসহ বিভিন্ন মাঠে ভেকু মেশিন দিয়ে চলছে ফসলি জমিতে পুকুর খনন । কোথাও আবার খননকৃত জমি থেকে ট্রাকক্টর দিয়ে মাটি পরিবহন করে কেউ নিচু জমি ভরাট করছেন আবার কেউ ফসলি জমি ভরাট করে বাড়ী অথবা বাগান তৈরির প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এতে একদিকে যেমন খাদ্য শস্য উ’পাদন কমে
যাচ্ছে,অন্য দিকে পাকা সড়কে মাটি পরে কর্দমাক্ত হয়ে সড়ক নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এতে
চলাচলেও চরম দূর্ভোগে পরছেন পথচারীরা।
কাশিয়াবাড়ী বাজারে আমজাদ হোসেন,সাগর আহম্মেদসহ বেশ কয়েকজন বলেন,দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে তাল মিলিয়ে যেখানে সেখানে অধিক বসতি গড়ে ওঠছে। কিন্তু ফসলি জমি এক ইঞ্চিও বাড়ছেনা। অথচ যেভাবে প্রকাশ্য ফসলি জমিতে একের পর এক পুকুর খনন-ভরাট এবং অপরিকল্পীতভাবে যত্রতত্র বসতি গড়ে তোলা হচ্ছে তাতে খাদ্য শস্য উ’পাদন কমে ভবিষ্যত প্রজন্ম চরমভাবে খাদ্য ঘার্তিতে পরবে। তাই দ্রুত ফসলি জমি রক্ষায় পুকুর খনন-ভরাটকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত
পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানান তারা। বাঁকা মাঠে প্রায় ৮বিঘা ফসলি জমিতে চারটি ভেকু মেশিন দিয়ে দিন-রাত চলছে পুকুর খনন। জমির মালিক কাঁশোপাড়া গ্রামের শহিদুল ইসলামের সাথে কথা হলে তিনি জানান,ভূমির শ্রেনী পরিবর্তন বা প্রশাসনের কোন অনুমতিনেয়া হয়েছে কিনা তা আমি বলতে পারছিনা। এসব ভেকু মেশিন মালিক হিরো বলতে পারবেন। তিনিই সব ম্যানেজ করার সর্তে চুক্তি করে নিয়েছেন।উপজেলার বড় বিশা গ্রামের মাঠে কয়েক স্থানে মোট ২০/২৫বিঘা জমিতে চলছে
পুকুর খনন। এর মধ্যে সাড়ে সাত বিঘা জমির মালিক দিদারুল আমিনের সাথে কথা হলে তিনি জানান,আমি ঢাকায় থাকি আমার পুকুরখননের সকল দায়িত্ব ভেকু মালিক সেন্টু নিয়েছেন। এব্যাপারে তিনিই ভাল বলতে পারবেন।
লাখবেড়ি গ্রামের জমির মালিক মিঠু জানান,তিনি ৮/১০কাঠা জমিতে পুকুর
খনন করছেন। পুকুর খননে জমির শ্রেনী পরিবর্তন করেছেন কিনা জানতে চাইলে
তিনি বলেন,ভেকু মেশিন মালিক সাইদুর রহমান সব কিছু জানেন। আমি কিছু বলতে পারছিনা।
ভেকু মালিক উপজেলার হরিপুর গ্রামের সেন্টু বলেন,সাধারণ কৃষকরা জমির শ্রেনী পরিবর্তনে এসব ঝামেলা পোহাতে চায়না। তাই আমরাই সব কিছু ম্যানেজ করার দায়িত্ব নিয়ে পুকুর খনন করে থাকি।সিংসাড়া গ্রামের ভেকু মালিক হিরো বলেন,শহিদুলের সাথে পুকুর খননে চুক্তি
করে কাজ করছি। অবশ্য অনেক ক্ষেত্রে আমাদেরকেই সব বিষয়ে দেখতে হয়।
কাশিয়াবাড়ী গ্রামের ভেকু মালিক সাইদুর রহমান বলেন,শুধুমাত্র জমি থেকে মাটি
নেয়ার শর্তে লাখবিড়ির মিঠুর পুকুর খনন করছি। মাটিগুলো কাশিয়াবাড়ী ঈদগা
ময়দানে ভরাট করা হচ্ছে।আত্রাই উপজেলা কৃষি অধিদপ্তরের তথ্য মতে, উপজেলায় মোট ফসলি জমির পরিমাণ ২৪হাজার ৫০হেক্টর। এর মধ্যে গত পাঁচ বছরে পুকুর খননসহ বিভিন্ন কারণে প্রায় ১৫০ বিঘা ফসলি জমি কমেছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তাপস কুমার রায় বলেন, মালিক জমিতে পুকুর খনন করলে
তাতে আমরা বড়জোর পুকুর খননে নিরু’সাহিত করতে পারবো কিন্তু বাধা দিতে পারিনা। কিন্তু ফসলি জমিতে পুকুর খননে শুধু বাধায় নয়,আইন প্রয়োগ করে ফসলি জমি সুরক্ষার নির্দেশনা রয়েছে তাহলে কেন পদক্ষেপ নেয়া যাবেনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,ফসলি জমি কৃষকের ব্যক্তি মালিকানা সম্পত্তি,কৃষক
জমিতে কি করবে সেটা কৃষকের ব্যক্তিগত বিষয়। এখানে কৃষকের বিরুদ্ধে শক্তভাবে আইনও প্রয়োগ করা যাবেনা।নওগাঁ জেলা কৃষি অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন,উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা যদি এধরনের কথা বলে থাকেন তাহলে ভুল বলেছেন। ব্যক্তি মালিকানা সম্পত্তি হলেও যা ইচ্ছে তা করা যাবেনা। ফসলি জমিতে পুকুর খনন করতে হলে অবশ্যই ভূমি সুরক্ষা আইন মেনেই করতে হবে।আত্রাই উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) অঞ্জনকুমার বলেন,পুকুর খননকারীদের বিরুদ্ধে ইতি মধ্যে অভিযান চালিয়েছি কিন্তু কাউকে পাইনি। দ্রুতই আবারো
অভিযান চালিয়ে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।