এসএম রুবেল চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি
চাঁপাইনবাবগঞ্জের অবৈধ ও অনিবন্ধিত ভুয়া এনজিও মধুমতি সমাজ উন্নয়ন সংস্থায় থাকা ৩৫ হাজার গ্রাহকের আমানতের ১০৫ কোটি টাকা ফেরতের দাবিতে সড়ক অবরোধ ও অবস্থান কর্মসূচি পালিত হয়েছে। এসময় ৭ দিনের আল্টিমেটাম দেন প্রতারণার শিকার কয়েক হাজার গ্রাহক ও এনজিও কর্মীরা৷ দাবি আদায় না হলে আমরণ অনশন ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলাকে অচল করে দেয়ার হুশিয়ারী দেন তারা৷ সোমবার (০৮ মে) বেলা ১১টায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে সড়ক অবরোধ ও অবস্থান কর্মসূচি পালিত হয়।
পরে জেলা প্রশাসন ও জেলা পুলিশের উদ্ধর্তন কর্মকর্তারা প্রতারক চক্রের সকল সদস্যকে দ্রুত সময়ের মধ্যে গ্রেপ্তার ও সুষ্ঠ বিচারের আশ্বাস দিলে অবস্থান কর্মসূচি ও সড়ক অবরোধ প্রত্যাহার করেন ভুক্তভোগী গ্রাহকরা।
মধুমতি এনজিওর শাখা ব্যবস্থাপক ফয়সাল আজম জানান, মধুমতি গ্রুপের এমডি মাসুদ রানা গত বছরের নভ্ম্বের মাসের ১৭ তারিখ গোমস্তাপুরে অস্ত্রসহ পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন। এরপর থেকেই তার আপন ভাই ফারুক আহমেদসহ পরিবারের সদস্যরা গ্রাহকের টাকা নিয়ে আত্বগোপনে রয়েছে। এখন পর্যন্ত তাদের বিরুদ্ধে আদালতে পাঁচটি মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে। এরপরেও পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করতে পারছে না। তাই গ্রেপ্তারের দাবিতে এই অবস্থান কর্মসূচির আয়োজন করেছে ভুক্তভোগী গ্রাহক ও এনজিও কর্মীরা।
অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নেয়া মধুমতি এনজিও’র শিবগঞ্জ উপজেলার একটি শাখার কর্মচারী তারেক আহমেদ বলেন, আমি মধুমতির অফিসে মাঠকর্মী হিসেবে কাজ করতাম। সেখান থেকে পাওয়া বেতনের টাকাগুলো উঠাতাম না। পরিবারের ছেলেমেয়েকে লেখাপড়ার খরচ জোগাতে ও সংসারে কাজে লাগাতে টাকাগুলো জমা রেখেছিলাম। জমা হয়ে মোট ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা হয়েছিল। শত কষ্টের মধ্যেও টাকা উত্তোলন করিনি। কিন্তু সেই টাকাও এখন পাচ্ছি না।
সদর উপজেলার গোবরাতলা ইউনিয়নের চাঁপাই-মহেশপুর গ্রামের জহুরুল ইসলাম জানান,পাঁচটি মামলা হলেও আসামীদের আটক করছে না পুলিশ। হাজার হাজার গ্রাহক শত কোটি টাকা নিয়ে পালিয়েছে প্রতারক চক্র পরিবার। অসহায় দিন যাপন করছে এসব ভুক্তভোগী গ্রাহকরা। কিন্তু প্রশাসনের ভূমিকা এখানে নিরব। আসামী আটক বা গ্রাহকদের আমানত ফেরতের বিষয়ে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। জেলা পুলিশ ও জেলা প্রশাসন ব্যবস্থা নেয়ার জন্য প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তা না বাস্তবায়ন করলে আগামীতে কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। এমনকি আমরণ অনশনসহ পুরো জেলাকে অচল করে দেয়া হবে।
সদর উপজেলার কালিনগর গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা নাইমুল হক বলেন, মধুমতি সমাজ উন্নয়ন সংস্থা জেলাজুড়ে ৪৬টি শাখায় অবৈধ ক্ষুদ্র ঋণের কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। সাধারণ জনগণকে এক লাখ টাকা জমা রাখলে মাসে ১২০০ টাকা লাভ দেয়া হবে এবং জমাকৃত টাকা চাওয়া মাত্র ফেরত দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে জনগণের কাছ থেকে আমানত সংগ্রহ করে মধুমতি৷ এভাবে জেলার পাঁচ উপজেলায় ৩৫ হাজার গ্রাহকের কাছ থেকে ১০৫ কোটি টাকা সংগ্রহ করে। আজকাল করে টাকা ফেরত দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিভিন্ন কৌশলে সময় পার করে এবং টাকা না দিতে মধুমতি সমাজ উন্নয়ন সংস্থার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসুদ রানা স্বেচ্ছায় অস্ত্রসহ আটকের নাটক করে৷
পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিলে পুলিশ সুপার এএইচএম আব্দুর রকিব মামলার আসামীদেরকে গ্রেপ্তার করার প্রতিশ্রুতি দেন। এসময় তিনি বলেন, আমরা খুব শীগ্রই মামলার আসামীদেরকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনব। এমন আশ্বাসে সড়ক থেকে সরে যান ভুক্তভোগীরা।
পরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে গিয়ে অবস্থান নেয় ভুক্তভোগী গ্রাহকরা। এসময় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে স্থানীয় সরকার শাখার উপ-পরিচালক (উপ-সচিব) দেবেন্দ্র নাথ উঁরাও ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আহমেদ মাহবুব উল ইসলাম ব্যবস্থা গ্রহনের আশ্বাস দেন। এসময় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আহমেদ মাহবুব উল ইসলাম বলেন,এবিষয়ে আদালতে একাধিক মামলা চলমান রয়েছে। আদালত এনিয়ে সিধান্ত নিবে। আদালত এ সংক্রান্ত কোন নির্দেশনা দিলে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তা বাস্তবায়ন করা হবে।