Tuesday, September 16, 2025
spot_img

নোটিসঃ আমাদের সকল প্রতিনিধি পার্সোনাল একাউন্ট থেকে নিউজ পাবলিশ করে থাকে, যে-কোনো সংবাদের দায়ভার তারা নিজেরাই বহন করবে।

HomeUncategorizedইজারার শর্ত ভঙ্গ করে চাঁপাইনবাবগঞ্জের পশুর হাটে চলছে ইচ্ছেমতো খাজনা আদায় প্রতিবাদ...

ইজারার শর্ত ভঙ্গ করে চাঁপাইনবাবগঞ্জের পশুর হাটে চলছে ইচ্ছেমতো খাজনা আদায় প্রতিবাদ করলে খাজনার রশিদ মিলছে দেরিতে

ইজারার শর্ত ভঙ্গ করে চাঁপাইনবাবগঞ্জের পশুর হাটে চলছে ইচ্ছেমতো খাজনা আদায় প্রতিবাদ করলে খাজনার রশিদ মিলছে দেরিতে

এসএম রুবেল ক্রাইম রিপোর্টার রাজশাহী ব্যুরো।

কোরবানিকে সামনে রেখে গরুর হাটে জিম্মি ক্রেতা পাইকাররা,চাঁপাইনবাবগঞ্জের পশুর হাটগুলোতে ইজারাদারেরা ইচ্ছেমতো হাসিল বা খাজনা আদায় করছেন। তাঁরা প্রশাসনের বেঁধে দেওয়া ইজারা শর্ত ও নীতিমালার ধার ধারছেন না হাট মালিকরা, সরেজমিনে গিয়ে জেলার পশুর হাটগুলো ঘুরে বিক্রির রসিদ বা বই দেখে এবং ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে,গরু-ছাগল বিক্রিতে বর্তমানে নির্ধারিত খাজনার চেয়ে দ্বিগুণ পর্যন্ত খাজনা আদায় করা হচ্ছে জোরপূর্বক। কেবল তা-ই নয়,নীতিমালায় শুধু ক্রেতার কাছ থেকে খাজনা আদায়ের কথা থাকলেও বিক্রেতার কাছ থেকেও খাজনা আদায় করা হচ্ছে।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে,প্রতিটি গরু ও মহিষের জন্য ৫০০ টাকা এবং প্রতিটি ছাগল ও ভেড়ার জন্য ২৫০ টাকা খাজনা নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া গবাদিপশুর জন্য শুধু ক্রেতারাই খাজনা দেবেন বলা আছে নীতিমালায়।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের সবচেয়ে বড় হাট শিবগঞ্জ উপজেলার তত্তীপুর গরুর হাট।সপ্তাহের প্রতি শনিবার ও মঙ্গলবার এই হাটে পশু কেনাবেচা হয়ে থাকে। তবে এই হাটে সরেজমিনে দেখা যায়,হাটের কোথাও খাজনা আদায়সংক্রান্ত কোনো নিয়মাবলি বা তালিকা টাঙানো নেই। এতে সাধারণ ক্রেতা-বিক্রেতারা সরকার নির্ধারিত খাজনার পরিমাণ সম্পর্কে জানতে পারছেন না। প্রতিটি গরুর জন্য ৫০০ টাকা করে খাজনা আদায় করার কথা থাকলেও কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ৯০০-১০০০ টাকা করে খাজনা আদায় করা হচ্ছে। এর মধ্যে ক্রেতার কাছ থেকে ৮০০ টাকা এবং বিক্রেতার কাছ থেকে আদায় করা হচ্ছে ১০০-২০০ টাকা করে। ছাগলপ্রতি ২৫০ টাকা করে খাজনা নির্ধারণ করা থাকলেও আদায় করা হচ্ছে ৫০০ টাকা করে।

এছাড়াও কানসাট,মনাকষ,খাসেরহাট জেলার বিভিবিভিন্ন তক্তিপুরসোনাইচন্ডী,রহনপুর,মল্লিকপুর,আড়গড়া,রানিহাটি,নাচোল কুরবানির পশুর হাটে একই কায়দায় জোরপূর্বক চলছে অতিরিক্ত খাজনা আদায়। কানসাট হাটে গরু কিনতে এসেছিলেন দুলাল হোসেন। কথা বলে জানা যায়,তিনি রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলার হরিদাগঞ্জ থেকে এসেছেন। অনেকক্ষণ ঘুরে তিনি কোরবানির জন্য একটি গরু পছন্দ করেন। বিক্রেতা ফইমুদ্দিনের সঙ্গে দরদাম করে ৮৫ হাজার টাকায় গরুটি কিনে নেন। গরু বিক্রির ছাড়পত্র নেওয়ার জন্য পাশেই টেবিল-চেয়ার নিয়ে বসে ছিলেন ইজারাদারের প্রতিনিধি। তাঁর কাছে যান ওই গরুর ক্রেতা-বিক্রেতা। ইজারাদারের প্রতিনিধি ক্রেতার কাছ থেকে ৮০০ টাকা এবং বিক্রেতার কাছ থেকে ২০০ টাকা খাজনা দাবি করেন। এ নিয়ে তাঁদের বাগবিতণ্ডা হয়। তবে শেষমেশ ক্রেতা দুলাল হোসেনকে ৮০০ টাকা ও বিক্রেতা ফইমুদ্দিনকে নিরুপায় হয়ে ২০০ টাকা খাজনা দিয়েই হাট ছাড়তে হয়।

দুলাল হোসেন বলেন,তাঁর কাছ থেকে ৮০০ টাকা ও বিক্রেতার কাছ থেকে ২০০ টাকা খাজনা আদায় করলেও রসিদে (ছাড়পত্র) খাজনার ঘরে কোনো টাকার অঙ্ক লেখা নেই। তিনি খাজনার পরিমাণ লেখার জন্য জোর করলেও ‘বই (রসিদ) লেখক’সেটা লিখতে রাজি হননি উল্টো ধমক দিয়ে চলে যেতে বলে বারবার।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইজারাদারের প্রতিনিধি বলেন,আমি গরুর হাটের একজন বই লেখক। ইজারাদার আমাদের যেভাবে নির্দেশনা দিয়েছেন,সেভাবেই আমরা হাসিল করছি। সরকার নির্ধারিত হাসিলের পরিমাণ কত,সেটা ইজারাদারই ভালো বলতে পারবেন।’অতএব হাট মালিক অথবা ইজারাদারের সঙ্গে কথা বলুন।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের আরও আটটি পশুর হাট ঘুরে একই বিশৃঙ্খলা অনিয়মের একাধিক চিত্র দেখা গেছে। জেলার ছোট-বড় সব পশুর হাটেই চলছে জোরপূর্বক ইজারাদারের ইচ্ছামাফিক খাজনা আদায়। অধিকাংশ সবগুলোই হাটেই খাজনা আদায়-সংক্রান্ত নির্দেশনাবলি চাট টাঙানো হয়নি। নাচোল উপজেলার সোনাইচন্ডী হাটে সরেজমিনে দেখা যায়,গরুপ্রতি ৯০০ টাকা করে খাজনা আদায় করা হচ্ছে। এর মধ্যে ক্রেতার কাছ থেকে ৮০০ টাকা এবং বিক্রেতার কাছ থেকে ২০০ টাকা করে নেওয়া হচ্ছে। ছাগলের ক্ষেত্রে খাজনা আদায় করা হচ্ছে ৫০০ কারো কারো কাছে থেকে ৭০০ টাকা করে।  

মল্লিকপুর হাটে গরু বিক্রি করতে এসেছিলেন জিয়ারুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি। তিনি জানান,তিনি ১৫ বছর ধরে কোরবানির সময় গরু-ছাগল কেনাবেচার ব্যবসা করছেন। গ্রামে গ্রামে ঘুরে গৃহস্থদের কাছ থেকে দরদাম করে গরু কিনে কোরবানির সময় বিভিন্ন হাটে তুলে একটু লাভ দিয়ে সেগুলো বিক্রি করেন। এত দিন গরু বিক্রির জন্য ক্রেতার কাছ থেকে খাজনা আদায় করা হলেও এবার চাঁপাইনবাবগঞ্জের হাটগুলোতে বিক্রেতার কাছ থেকেও খাজনা আদায় করছেন ইজারাদারেরা। তবে এটা এ বছর এক ধরনের ব্যাপক অনিয়ম ও জোরপূর্ব আদায় করে নিচ্ছেন কেন জানি বলতে পারছি না।

নির্ধারিত খাজনার চেয়ে বেশি টাকা আদায়ের বিষয়ে জানতে চাইলে হাটের ইজারাদারেরা বলেন,কোরবানির সময় এসব ধরে কোনো লাভ নেই। শুধু এই হাটে নয়,কমবেশি সব হাটেই এখন একটু বেশি টাকা আদায় করা হচ্ছে। যে টাকা দিয়ে হাট ইজারা নেওয়া হয়,কোরবানির সময় একটু বেশি খাজনা আদায় না করলে পোষাবে না। এছাড়া বেশি দামে হাট ক্রয় করেছি তাই টাকা উঠাতে হলে এভাবে আমাদেরকে এগতে হবে। নইলে বড় আঙ্কেল লসে পড়তে হবে আমাদের সব ভাগীদারদের। এদিকে তক্তিপুর হাট মালিকদের কড়াই কড়াই অনিয়মের কথা তুলে ধরে জানতে চাইলে তারা বলেন যাদের কাছ থেকে বেশি দামে হাত কিনে নিয়েছি তাদের সাথে কথা বলেন।

এদিকে, জেলার অন্যান্য হাটে অতিরিক্ত অর্থ আদায় হলেও এক্ষেত্রে নিয়ম মেনেই হাট পরিচালনা করা হচ্ছে জেলা শহরের বটতলা হাটে। এমনকি সেখানে ইসলামী ব্যাংক, আল আরাফা ও এক্সিম ব্যাংকের বুথের মাধ্যমে জাল টাকা ধরার মেশিন ও পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়াও আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতিও জোরদার রয়েছে বটতলা হাটে। অন্যদিকে, জেলার বাকি হাটগুলোতে অতিরিক্ত খাজনা আদায়ের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ইউএনওদেরকে অবহিত করা হলেও কোন সাড়া পাওয়া যায়নি বা ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি তারা।

জেলার বিভিন্ন হার্টের অনিয়মের বিষয় জানতে চাঁপাইনবাবগঞ্জ স্থানীয় সরকার শাখার উপ-পরিচালক দেবেন্দ্রনাথ উঁরাও জানান, ইাজারার চুক্তির অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের এমন কোন অভিযোগ পাওয়া যায়নি। অভিযোগ পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

S M Rubel
S M Rubel
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি । মোবাইলঃ ০১৭৫৬-৯১১৯৪৬
RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments