ইয়াহিয়া খান,
খাঁজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান শ্রদ্ধেয় ডা. এম এম আমজাদ হোসেন সাহেব এর ১১তম মৃত্যু বার্ষিকী আজ।
২০১২ সালের ১১ সেপ্টেম্বর মৃত্যু বরণ করেন। আজ তার ১১ম মৃত্যু বার্ষিকী উপলক্ষে তার আত্মার শান্তি কামনা করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বিশেষ দোয়া অনুষ্ঠান করা হয়।
তিনি একজন মানুষ যিনি শুধু নিজেই স্বপ্ন দেখেননি, অন্যের স্বপ্নকেও বাস্তবায়নে রুপ দিতে সাহায্য করছেন। যিনি তার চিন্তা ভাবনাকে শুধুই সমাজের মানুষের জন্য উৎসর্গ করেছেন। যার অক্লান্ত পরিশ্রমে তৈরি করেছেন ক্যান্সার সেন্টার, মেডিকেল কলেজ, নার্সিং ইনস্টিটিউট, বিশ্ববিদ্যালয়, বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সহ নানা সেবামূলক প্রতিষ্ঠান। তিনি তৈরি করেছেন হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থান। একটি এলাকার মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন, অর্থনৈতিক অবস্থা পরিবর্তন করেছেন।
তিনি প্রয়াত কিংবদন্তি ডা. এম এম আমজাদ হোসাইন।
বংশ পরস্পরাঃ
আজ ড. এম. এম আমজাদ হোসেনের পূর্বপুরুষ ছিলেন বাংলা নবাব মীর কাসিমের সেরেস্তাদার।
জন্ম ও পারিবারিক জীবনঃ
১৯২৫ সালের ১ অক্টোবর সিরাজগঞ্জ জেলার অন্তর্গত এনায়েতপুর গ্রামের জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা আলহাজ্ব মোসলেম উদ্দিন ও বেগম মেহের-উন-নেছা। ১৯৫০ সালে হযরত খাজা এনায়েতপুরী (রহ:), এর তৃতীয় কন্যা খাজা তাজমহলের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তার ঔরসে দুই পুত্র ও তিন কন্যা জন্ম লাভ করে।
ইন্তেকালঃ
২০১২ সালের ১১ সেপ্টেম্বর।
অনুসৃত তরীকাঃ
তিনি উপমহাদেশের প্রখ্যাত বুজুর্গ সুফী-দার্শনিক, বাংলা আসামের শতশত খানকাহ্ শরীফের মূল রাহনামা বা আধ্যাত্মিক গুরু হজরত মাওলানা শাহ সূফী খাজা ইউনুস আলী এনায়েতপুরী (রহ.) এর একনিষ্ঠ মুরিদ।
শিক্ষাঃ
ইসলামের প্রাথমিক শিক্ষা অর্জনের পর ১৯৪১ সালে স্থল-পাকড়াশী স্কুল থেকে 'মেট্রিকুলেশন', ১৯৪৩ সালে রাজশাহী সরকারি কলেজ থেকে 'আইএসসি’ এবং ১৯৪৮ সালে কলিকাতা মেডিকেল কলেজ থেকে 'এমবি-ব্যাচেলর অব মেডিসিন’ (বর্তমান শিক্ষা পদ্ধতিতে এমবিবিএস) ডিগ্রী অর্জন করেন।
পুরস্কার ও স্বীকৃতিঃ
শীর্ষস্থানীয় এই শিল্পোউদ্যোক্তা দেশের বেসরকারি খাতে শিল্প স্থাপন, পণ্য উৎপাদন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং জাতীয় আয় বৃদ্ধিসহ সামগ্রিকভাবে জাতীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখার কারণে সরকার তাকে ১৯৯৮ সালে সি,আই,পি এর মর্যাদা প্রদান করেন। একই বছর তিনি শ্রেষ্ঠ করদাতা সম্মানে ভূষিত হন। প্রয়াত আমজাদ হোসেনের সেই পথ অনুসরণের ফলশ্রুতিতে গত কয়েক বছরে বাংলাদেশের শীর্ষ ১০ করদাতাদের তালিকায় অধিকাংশ তাঁর পরিবারের সদস্য। এছাড়াও তিনি টানা তিনবার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বাংলাদেশ টেক্সটাইল অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন।
শিল্পে অবদানও অনুকরণীয় কর্মঃ
একান্ত নিভৃতচারী ও প্রচার বিমুখ এই মানুষটি কাজ করে গেছেন সবার অলক্ষ্যে, লোকচক্ষুর অন্তরালে। তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানে ও অবাঙ্গালী শিল্পপতিদের দাপটের বিপরীতে যে গুটিকয়েক দেশপ্রেমিক বাঙ্গালী শিল্পপতি দেশের উন্নয়নে হাল ধরেছিলেন, ড. এম এম আমজাদ হোসেন তাদের মধ্যে অন্যতম। ঔষধ শিল্পে ড্রাগ ইন্টারন্যাশনাল লিঃ, পাট ও বস্ত্র শিল্পে আলহাজ্ব টেক্সটাইল ও আলহাজ্ব জুটমিল, সিরামিক শিল্পে এটিআই সিরামিক, আই টিতে- এ টি আই লিঃ, চা শিল্পে এম এম আমজাদ টি এস্টেটসহ আরও বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলে ব্যাপক কর্মসংস্থান সহ দেশের অর্থনীতিতে নজিরবিহীন ভূমিকা পালন করেন।
কর্মবীর ডা. এম এম আমজাদ হোসেনের চিন্তা-চেতনা মন মননে একটি বাসনা ছিল তার প্রতিটি প্রতিষ্ঠান বিশ্বে "Center of Excellence" হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাবে। এ লক্ষ্যকে সামনে রেখে তার উত্তরসূরীরা গৃহীত যুগোপযোগী নতুন কর্মপরিকল্পনাসমূহ বাস্তবায়ন করে যাচ্ছেন।
আত্মশক্তিতে বলিয়ান এই বিশাল কর্মযজ্ঞের কর্ণধার যার বিত্ত হতে চিত্ত বড়ো বলে সার্বজনীন মানবরুপ ও তার কর্মের সৌন্দর্য আমাদেরকে চুম্বকের মত আকর্ষণ করে। তিনি আমাদের পথের দিশা এবং আগামী দিনের চালিকা শক্তি হয়ে মানুষের স্মৃতিপটে অমর হয়ে থাকবেন।
সমাজসেবাঃ
সমাজসেবার ব্রতটি তার অন্তর থেকে স্বতোৎসারিত অনুরাগ হয়ে অস্কুরিত পারিবারিক পরিবেশ থেকে সৃষ্টি হয়েছে। তাতে বারিসিঞ্চিত করেছেন তার দীক্ষাগুরু হযরত খাজা ইউনুস আলী (রহ.)। তবে উনবিংশ শতকের অন্যান্য সমাজসেবীদের দ্বারা প্রভাবিত হন নাই এমনটা নিশ্চিত করে বলা যায় না।
ড. এম এম আমজাদ হোসেন যুবক বয়সেই নারী শিক্ষার পশ্চাদপদতায় বেদনার্ত হলেন এবং প্রতিষ্ঠিত করলেন নেহের-উন-ন্নেছা উচ্চ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়। এতদঞ্চলের মহিলাদের শিক্ষার দারুন উন্মুক্ত হলো। তার প্রচেষ্টায় নারী শিক্ষার দিগন্ত প্রসারিত হল।
এটাও বিশেষভাবে লক্ষণীয় যে, যেখানেই তিনি অর্থকরী শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়েছেন সেখানেই বিদ্যার্জনের ব্যবস্থায়ও ব্রতী রয়েছেন। আলহাজ্ব টেক্সটাইলের সঙ্গে আলহাজ্ব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। জামালপুরের জুট মিলের পাশেই পার্থিব শিক্ষার জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। তিনি শিল্পপতি হয়েছেন সমাজ হিতৈষণার প্রেরণা থেকে। একটি জাতির পূর্ণাঙ্গ বিকাশ ঘটার প্রধান উপাদান শিক্ষা। সমাজ উন্নয়নের প্রথম সোপান শিক্ষা। তার প্রতিষ্ঠিত খাজা ইউনুস আলী শিক্ষা পরিবার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। সমাজ কল্যাণের বাস্তবায়ন ও বর্তমান প্রজন্মকে দক্ষ কর্মী তৈরি করে শ্রমবাজারে অবদান রাখার আন্তরিকতা তার জনকল্যাণের উপলব্ধির অঙ্গ। চিকিৎসা শিক্ষা ও চিকিৎসা সেবায় খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল/নাসিং কলেজ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় বৃহৎ প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃত। খাজা ইউনুস আলী ক্যান্সার সেন্টার এতদঞ্চলের নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠান। ঢাকা শহরের বাইরে উত্তরবঙ্গে এটি কার্ডিয়াক সার্জারির একমাত্র প্রতিষ্ঠান। ব্যয়বহুল চিকিৎসাকে তিনি করেছেন সহজলভ্য ও সুলভ। সমাজ হিতৈষণার এমন মহত্বের অবদান বিরল। ঔষধ প্রযুক্তিতে বিশেষায়িত ক্ষেত্রের সর্বাধুনিক ক্ষেত্র ড্রাগ ইন্টারন্যাশনাল ও তার বিভিন্ন শাখাসমূহ।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ সেলিম খান, নির্বাহী সম্পাদকঃ শেখ রবিউল ইসলাম আজম। যোগাযোগঃ ০১৮১১-২০২৫৩৩
বিঃদ্রঃ আমাদের সকল প্রতিনিধি নিজস্ব একাউন্ট থেকে স্বাধীনভাবে সংবাদ প্রকাশ করতে পারে, যে-কনো সংবাদের দায়ভার তারা নিজেরাই বহন করবে।