বারবার অভিযানেও বন্ধ হচ্ছেনা কেরানীগঞ্জে অবৈধ গ্যাস সংযোগের রমরমা কারবার। গেল কয়েক বছরে দফায় দফায় অভিযান চালিয়ে কেরানীগঞ্জের বিভিন্ন এলাকার অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেও কোনো লাভ হয়নি।
তাস গ্যাসের অসাধু কিছু ঠিকাদার এবং স্থানীয় প্রভাবশালীদের একটি মহল টাকার বিনিময়ে বিচ্ছিন্ন সংযোগে গ্যাস সরবরাহের ব্যবস্থা করছে, তেমনি দিচ্ছে নতুন সংযোগও। পাশাপাশি ভুয়া কাগজ পত্রের মাধ্যমে কথিত গ্রাহকদের কাছ থেকে প্রতিমাসে আদায় করা হচ্ছে বিলও। এতে একদিকে সরকার যেমন রাজস্ব হারাচ্ছে তেমনি বৈধ গ্রাহকরা ভুগছেন গ্যাস সংকটে। এ ছাড়া নিম্নমানের সংযোগ উপকরণের কারণে বাড়ছে বিস্ফোরণ জনিত দুর্ঘটনা।
সরেজমিনে কেরানীগঞ্জের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে জানা গেছে, জিনজিরা তিতাস গ্যাস অফিসের মোট ঠিকাদার ৬ জন। এদের মধ্যে শাহ আলম, ইউসুফ ও সিরাজ অন্যতম। এলাকাবাসীর অভিযোগ অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশে কেরানীগঞ্জের সর্বত্র বৈধ সংযোগ থেকে প্রায় তিন গুনের বেশি গ্যাসের অবৈধ সংযোগ দেয়া হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কেরানীগঞ্জ দারুস সালাম এলাকায় অনেক বাড়ীতে রয়েছে অবৈধ গ্যাস সংযোগ। তার সব গুলো সংযোগই দিয়েছে সিরাজ নামে এক ব্যক্তি। তিনি তিতাত গ্যাসের ঠিকাদার পরিচয়ে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে দীর্ঘ কয়েক বছর যাবৎ কেরানীগঞ্জ দারুস সালাম এলাকায় ঘরে ঘরে পৌঁছিয়ে দিচ্ছে অবৈধ গ্যাস সংযোগ। আগানগর ইউনিয়নের কবরস্থান সংলগ্ন জাবালে নুর সুপার মাকেটে রয়েছে অসংখ্য অবৈধ গ্যাস সংযোগ। এছাড়া শুভাঢ্যা ইউনিয়ন, হাবিব নগর ও পূর্ব বন্ধক ঘাটপাড়া অসংখ্য অবৈধ গ্যাস সংযোগ দিয়েছে ঠিকাদার সিরাজ। জিনজিরার ৪নং ওয়ার্ডে ঠিকাদার সিরাজ ও শামিম যৌথ ভাবে অবৈধ সংযোগ দিয়ে প্রতি মাসে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। মডেল টাউনে বৈধ সংযোগ থেকে দ্বিগুনেরও বেশি অবৈধ সংযোগ দেয়া হয়েছে। এ সকল অবৈধ সংযোগ করে দিয়েছে ঠিকাদার ইউসুফ।
শাক্তা ইউনিয়নের খোলামোড়া এলাকায় সাব ঠিকাদার রাজা। রাজার ইচ্ছামত অবৈধ গ্যাস সংযোগ দিয়ে থাকে। এর মধ্যে আক্তার হোসেন তার বাসায় ১২টি অবৈধ গ্যাসের চুলা রয়েছে। মঞ্জুরমোল্লার ৫তলা বাড়িতে লাইজার বিহীন ৩০টি চুলার অবৈধ সংযোগ রয়েছে। মনির মোল্লা (পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি) তার বাসায় ৬টি অবৈধ গ্যাসের চুলায় সংযোগ রয়েছে। হযরত আলীর খানা ডুলির কারখানা আবাসিকের জন্য গ্যাস লাইন নিয়ে বানিজ্যিকভাবে চালিয়ে প্রতিমাসে লাখ লাখ টাকা আয় করছে। মফিজ মোল্লা (নিমতলা) খানা ডুলি কারখানায় ৩টি ও বাসায় ২টি অবৈধ গ্যাস সংযোগ রয়েছে। নুর নবী খানা ডুলি কারখানা তিনিও আবাসিক সংযোগ নিয়ে বানিজ্যিক ভাবে চালাচ্ছে।
এবার অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে আসল থলের বিড়াল ঠিকাদার সিরাজের কেরানীগঞ্জ দারুস সালাম এলাকায় রয়েছে ৬তলা বিশিষ্ট কোটি টাকা মূল্যের একটি আলিশান বাড়ি। সেই বাড়িতেই অবৈধ গ্যাস সংযোগ করে নিয়েছে। তার কিছুটা দূরেই নির্মাণাধিন আরও একটি ৫ তলা ভবন। কেরানীগঞ্জ শাক্তা এলাকায় রয়েছে তার জমি এবং বিভিন্ন এলাকায় নামে বেনামে রয়েছে ফ্লাট। এখানেই শেষ নয়, তার নিজ গ্রাম ভোলা জেলার দৌলত খান থানাধীন এলাকায়ও গড়েছেন আলিশান বাড়ি। এক সময় সিরাজ গ্যাস ঠিকাদার সোরহাবের লেবার হিসেবে কাজ করতো। সোরহাবের মৃত্যুও পরেই সিরাজ পেয়েছেন আলাদিনের চেরাগ। লেবার থেকে রাতারাতি হয়ে যান ঠিকাদার।
দীর্ঘ কয়েক বছর যাবৎ কেরানীগঞ্জের ভিবিন্ন এলাকায় ঘরে ঘরে পৌঁছিয়ে দিয়েছে শতশত অবৈধ গ্যাস সংযোগ। গ্রাহকদের কাছ থেকে গ্যাস বিল দেয়ার কথা বলে সিরাজ, ইউসুফ, শামিম, জলিল এবং সেলিম প্রতি মাসে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা।
এ বিষয়ে সিরাজের কাছে জানতে চাইলে তিনি অবৈধ গ্যাস সংযোগের বিষয়ে অস্বীকার করেন। তিতাস গ্যাস কেরানীঞ্জের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী বিধান চন্দ্র মৈত্র বক্তব্য দিতে অনিহা প্রকাশ করেন। অবৈধ সংযোগের সঙ্গে স্থানীয় রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রভাবশালীরা সরাসরি জড়িত বলেই বারবার অভিযান চালিয়েও লাভ হয় না।