মোহাম্মদ সাইদ: রাজধানীসহ সারাদেশে বিজয়া দশমী ও প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে আজ বুধবার শেষ হয়েছে হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা।
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস, মানুষের মনের আসুরিক প্রবৃত্তি কাম, ক্রোধ, হিংসা, লালসা বিসর্জন দেয়াই মূলত বিজয়া দশমীর মূল তাৎপর্য। এ প্রবৃত্তিগুলোকে বিসর্জন দিয়ে একে অন্যের সঙ্গে ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠা করাই এ আয়োজনের উদ্দেশ্য।
তারই ধারাবাহিকতায় বুধবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে কেরানীগঞ্জের আগানগর এলকায় বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে প্রতিমা বিসর্জনকালে কেরানীগঞ্জের আগানগর ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর খুশিকে মারধর করেছেন র্যাবের সিভিল টিমের সদস্যরা।একপর্যায়ে তাকে পিস্তল ঠেকিয়ে গুলি করার হুমকি দেন তারা।
পরে প্রতিমা বিসর্জন দিতে আসা কয়েক হাজার জনতা গাড়িসহ র্যাব সদস্যদের অবরুদ্ধ করেন। খবর পেয়ে পুলিশ ও র্যাবের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে জনতার রোষ থেকে র্যাব সদস্যদের উদ্ধার করে নিয়ে যান।
আগানগর ৬নং ওয়ার্ড মেম্বার মো. শাহীন জানান, রাত সাড়ে ৮টার দিকে প্রতিমা বিসর্জন দিতে আসা লোকজনের সঙ্গে আগানগর নাগরমহল এলাকার বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে যান ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর শাহ খুশি। এ সময় বেড়িবাঁধে যানজট লেগে যায়। চেয়ারম্যান নিজেই যানজট নিরসনে কাজ করছিলেন।
তিনি একটি মাইক্রো গাড়িকে (ঢাকা মেট্রো খ ১২-৮৬৫১) বেড়িবাঁধ থেকে সরিয়ে দিতে গেলে চালকের সঙ্গে তার কথা কাটাকাটি হয়। এর জেরে ওই গাড়িতে সাদা পোশাকে থাকা র্যাবের কয়েক সদস্য বের হয়ে চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর শাহ খুশিকে মারধর শুরু করেন। মারতে মারতে তাকে পাশের একটি মার্কেটের ভেতর নিয়ে যান।
সেখানে তার পরনের পোশাক ছিঁড়ে ফেলে র্যাব সদস্যরা। এ সময় চেয়ারম্যান তার পরিচয় দিলে তাকে অশ্রাব্য ভাষায় গালাগাল করে পিস্তল ঠেকিয়ে গুলি করার হুমকি দেন।
ইউপি সদস্যসহ স্থানীয় কয়েক ব্যক্তি মার্কেটের মধ্যে ঢুকে চেয়ারম্যানকে বাঁচাতে গেলে তাদেরও মারধর করে র্যাব সদস্যরা। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে কয়েক হাজার জনতার বিক্ষোভের মুখে র্যাব সদস্যরা গাড়ি নিয়ে চলে যাওয়ার চেষ্টা করে।
তবে জনতা গাড়িসহ তাদের অবরুদ্ধ করে রাখেন। জানা যায়, ওই গাড়িতে সাদা পোশাকে র্যাবের গোয়েন্দা শাখার ৮ সদস্য ছিলেন।
তারা হলেন- ডিএডি কাউসার, করপোরাল আহসান হাবিব, সৈনিক শাহান, সারোয়ার, এএসআই শরীফ, করপোরাল আহসান, জুবায়ের ও গাড়িচালক সৈনিক মনির। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএডি কাউসার বলেন, একটা ভুল বোঝাবুঝি থেকে অনাকাঙ্ক্ষিত এ ঘটনা ঘটেছে।
আগানগর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আসিফ বলেন, র্যাব সদস্যদের আচরণ ছিল অপেশাদার। তারা অশ্রাব্য ভাষায় যেভাবে গালাগাল ও কোনো কারণ ছাড়াই যেভাবে একজন ইউপি চেয়ারম্যানকে মারধর করেছে সেটা নজিরবিহীন।
আমরা এর নিন্দা এবং দোষী র্যাব সদস্যদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাই। এ বিষয়ে জানতে চাইলে কেরানীগঞ্জ সার্কেল অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাহাবুদ্দিন কবির বলেন, খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে র্যাব সদস্যদের নিরাপদে সরিয়ে নেই।
বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে। অবরুদ্ধ র্যাব সদস্যদের উদ্ধারে আসা র্যাবের টহল টিমের এসআই ইলিয়াস বলেন, প্রকৃতপক্ষে কী ঘটেছিল সেটা তদন্তের পর জানা যাবে। আমরা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিষয়টা জানিয়েছি। তদন্তের পর তারা এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।