চুয়াডাঙ্গার ছোটশলুয়া গ্রামের বহুরুপী আলমগীর কায়েম করেছে ত্রাসের রাজত্ব:চাঁদাবাজ ও মাদক সিন্ডিকেটের কাছে অসহায় এলাকাবাসী।
অনুসন্ধানী প্রতিবেদক:
চুয়াডাঙ্গার ছোটশলুয়া গ্রামের কুমিল্লাপাড়ার আলোচিত বহুরূপী চাঁদাবাজ আলমগীরের বিরুদ্ধে নিজ এলাকায় সাধারণ মানুষকে ভয়ভীতি দেখিয়ে ব্যাপক চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে। চাঁদাবাজ আলমগীরের দাপটে অতিষ্ট হয়ে উঠেছে এলাকাবাসী। দাবিকৃত চাঁদা দিতে না পারলে ভোক্তভোগীদের নানানভাবে হয়রানী করছে আলমগীর ও তার গ্যাং গ্রুপ। বহুরূপী চাঁদাবাজ আলমগীর কখনও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, কখনও জামায়াত শিবির, আবার কখনও যুবদল নেতা পরিচয় দিয়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে নিজ এলাকা।৫ই আগস্টের পর থেকে ভিন্ন ভিন্ন রাজনৈতিক পরিচয়ে চাঁদাবাজি, দখলবাজি ও সাধারণ মানুষকে ভয়ভীতি দেখিয়ে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে নিজ গ্রাম ছোটশলুয়াতেও। আলমগীরের চাঁদাবাজি থেকে রেহায় পাচ্ছে না এলাকার প্রবাসী বা দিনমুজুর কেউ। দ্রুত চাঁদাবাজ আলমগীরকে আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছে ভোক্তভোগী গ্রামবাসী।অভিযোগ সুত্রে জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গার দর্শনা থানাধীন তিতুদহ ইউনিয়নের ছোটশলুয়া গ্রামের কুমিল্লাপাড়ার শুকুর আলীর ছেলে আলমগীর হোসেন ৫ই আগষ্ট স্বৈরাচার শেখ হাসিনার পতন হওয়ার পর একই গ্রামের মৃত আনুর ছেলে দক্ষিণ কোরিয়া প্রবাসী আব্দুর রাজ্জাকের কাছে ১ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি করে। চাঁদার টাকা না দিলে রাজ্জাকের বাড়ী ঘর ভাঙচুর করার হুমকি প্রদান করে। এসময় রাজ্জাকের ভাই আব্দুর রহিম আলমগীরকে ৫৫ হাজার টাকা দেয়। বাকী টাকা দ্রুত সময়ের মধ্যে দেওয়ার জন্য হুমকি প্রদান করে।আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ৫ই আগষ্ট পর হঠাৎ করেই আলমগীর তার বাড়ী ভাংচুর করার জন্য উঠে পড়ে লাগে। এসময় আমার কাছে ১ লাখ টাকা চাঁদাদাবি করে। চাঁদা না দিলে বাড়ী ভাংচুর করা হবে বলে হুমকি দেয়। রাজ্জাক বলেন, আমরা নিরিহ প্রকৃতির মানুষ। মামলা মোকদ্দমার ঝামেলার মধ্যে থাকি না। কিন্ত আলমগীর এমনভাবে হুমকি ধামকি দেওয়া শুরু করে যে উপায় না পেয়ে আমার ভাইকে দিয়ে তার কাছে ৫০ হাজার টাকা পাঠাই। কিন্ত সে পুরো ১ লাখ টাকায় নিবে বলে জানাই। ১ লাখ টাকা না হলে নাকি গ্যাং গ্রুপ ম্যানেজ করা সম্ভব না। পরে তাকে মোট ৫৫ হাজার টাকা দিই। এবং বাকী টাকা পরবর্তীতে দিবো মর্মে রক্ষা পায়।ছোটশলুয়া গ্রামের একাধিক মানুষ অভিযোগ করে বলেন, এক সময় ডেসটিনি কোম্পানীতে মোটা অংকের টাকার লোভ দেখিয়ে আলমগীর গ্রামের বহু মানুষের কাছ থেকে টাকা নিয়ে ঢাকায় পালিয়ে যায়। দীর্ঘদিন ঢাকায় পালিয়ে থাকার পর নিজ গ্রামে ফিরে এসে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ছত্রছায়ায় ঘোরাফেরা শুরু করে। ৫ই আগষ্ট এর পর নিজেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা পরিচয় নিয়ে ছোটশলুয়া গ্রামের এক মহিলা উদ্যোক্তার কাছে ৫ লক্ষ টাকা চাঁদাবাজি শুরু করে। সেই টাকা দিতে বিলম্ব হওয়ায় চাঁদাবাজ আলমগীর তার দলবল নিয়ে উক্ত মহিলার মৎস্য হ্যাচারীতে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ক্ষতি সাধন করে।চাঁদাবাজ আলমগীর ও তার গ্যাং গ্রুপের নামে কেউ কিছু বললেই তাকে মারধর সহ নানানভাবে হয়রানী করে থাকে।নাম প্রকাশ না করার শর্তে ছোটশলুয়া গ্রামের কয়েকজন মৎস্যচাষী ও পুকুর মালিকরা বলেন, ৫ই আগষ্ট এর পরবর্তী সময় থেকে আলমগীর তাদের থেকে নানানভাবে হুমকি ধামকি দিয়ে চাঁদা আদায় করছে । চাঁদা দিতে অস্বীকৃত জানালে আলমগীর তাদের বিভিন্ন মামলায় ফাসানোর হুমকি দেয়।ছোটশলুয়া পাড়া জামে মসজিদ কমিটির একজন সদস্য অভিযোগ করে বলেন, আলমগীর ৫ই আগষ্টের পর কুমিল্লাপাড়া কবরস্থানের মধ্যে থাকা মেহগনি গাছ বিক্রি করে ৫০ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেছে। এছাড়া কবরস্থানে সরকারীভাবে ৩ লক্ষ টাকার উন্নয়ন কাজ চলা অবস্থায় ঠিকাদারের নিকট থেকে ২০ হাজার টাকা চাঁদা নেয়।সেই চাঁদার টাকা না দেওয়ায় আলমগীর নিজের পুকুরে অতিরিক্ত সার প্রয়োগ করে মাছ মেরে গ্রামের অনেকজনকে ফাঁসানোর ফাঁদ তৈরী করে। সে সময় সে নিজেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সক্রিয় কর্মী ও আন্দোলনে অংশগ্রহন করায় তার পুকুরে গ্রামের কয়েজন আওয়ামী লীগ নেতা বিষ প্রয়োগ করে মাছ নিধন করেছে মর্মে অভিযোগ তুলে, ভূয়া নাটক প্রচার করতে থাকে। কিন্ত পুকুরে বিষের কারনে নয় মাত্রাতিরক্ত সার প্রয়োগের কারনে মাছ মারা যাওয়ার বিষয়টি সামনে আসলে বির্তক এড়াতে চুপ হয়ে যায় আলমগীর। এরপরই তাকে জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীদের সাথে ওঠাবসা করতে দেখে স্থানীয়রা।বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জামায়াতে ইসলামীতে সুবিধা করতে ব্যর্থ হওয়ায় হঠাৎ করেই স্থানীয় যুবদলের রাজনীতি সক্রিয় হওয়ায় চেষ্টা করে। যুবদল ও বিএনপির মিটিং মিছিলে অংশ গ্রহন করে।এরই মধ্যে ছোটশলুয়া গ্রামে ভেকু নিয়ে পুকুর খনন করতে আসা আলমডাঙ্গার লাল মোহাম্মদ এর কাছে ৫০ হাজার টাকা চাঁদাদাবি করে। চাঁদা না দিলে ভেকু মেশিন আগুন দিয়ে পুকুরে দেওয়ার হুমকি প্রদান করে ও ভেকুর চাবী কেড়ে নেয়। পরবর্তীতে ২০ হাজার টাকা নিয়ে ভেকুর চাবী ফেরত দেয়। সেই সাথে এই ঘটনা কাউকে জানালে পরিনতি ভাল হবে না মর্মে হুশিয়ারী প্রদান করে।ছোটশলুয়া বিলপাড়ার একাধিক মানুষ অভিযোগ করে বলেন, আলমগীর ও জনৈক সোহেল নামে মাস দেড়েক আগে ৩৬ বোতল ফেন্সিডিল সহ স্থানীয়দের কাছে ধরা পড়ে। যারা তাদের ফেন্সিডিল সহ ধরেছিলো তাদের প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে সেখান থেকে চলে আসে। ৫ই আগষ্ট এরপর ছোটশলুয়া কুমিল্লাপাড়ার ত্রাস হিসাবে এক মহা আতঙ্কের নাম এখন এই চাদাবাজ আলমগীর।জামায়াত,যুবদল,বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সুবিধা করতে না পেরে আলমগীর বর্তমানে তারেক ঐক্যফন্ট নামক একটি সংগঠনের চুয়াডাঙ্গা জেলা কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক হিসাবে পরিচয় দিচ্ছে। চাঁদাবাজি ও মাদক সিন্টিকেট এর নেটওয়ার্ক গড়ে আলমগীর এখন ছোটশলুয়া গ্রামের ত্রাসে পরিনত হয়েছে।যার বিরুদ্ধে বর্তমানে টু শব্দ করার সাহস নেই কারো। চাঁদাবাজ ও ত্রাস আলমগীরের বিরুদ্ধে কিছু বলতে গেলেই হামলা মামলার শিকার হতে হয় স্থানীয়দের। আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীকে তদন্তপূর্বক আলমগীরের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জোর দাবি জানিয়েছে এলাকার ভোক্তভোগীরা।