
নওগাঁর মান্দায় শিক্ষারসুমন কুমার বুলেট নওগাঁ জেলা প্রতিনিধিঃ
নওগাঁর মান্দার পরানপুর উচ্চবিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের মুখে অবশেষে পদত্যাগ করেছেন প্রধান শিক্ষক আব্দুল ওয়াহেদ। নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয় চত্বরে বিক্ষোভ শুরু করে। এর এক পর্যায়ে প্রধান শিক্ষকের মোটরসাইকেল পুড়িয়ে তারা। তবে প্রধান শিক্ষক আব্দুল ওয়াহেদ দাবি করেন পরীক্ষার টাকা জমা টাকা চাওয়ায় শিক্ষক আব্দুর রহমান ও শিক্ষকদের প্রাইভেট পড়ানো বন্ধ করানোর নোটিশ দেওয়ায় শিক্ষার্থীদের লেলিয়ে দিয়েছেন গণিত বিষয়ের শিক্ষক জিয়াউল হক।
জানা যায়, বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক নিয়মিত প্রাইভেট পড়ান। গতকাল শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট না পড়াতে শিক্ষকদের নোটিশ দেন প্রধান শিক্ষক। এ ছাড়াও এবারে অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বৃত্তি পরীক্ষা হবে বলে বিদ্যালয়ের প্রয়াত সভাপতি শাহাদত হোসেনের ইচ্ছা মতে অষ্টম শ্রেণির বাছাইকৃত ২৪ জন শিক্ষার্থীকে সকাল ৮ টা থেকে ১০ টা পর্যন্ত অতিরিক্ত ক্লাস করায়। এর বিনিময়ে ওই শিক্ষার্থীদের কাছে থেকে মাসে এক হাজার টাকা ফি নেওয়া হয়। অন্যান্য শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট পড়ানো বন্ধ করায় তাকে পদত্যাগ করানো হয়েছে। এ সময় শিক্ষার্থীরা প্রধান শিক্ষক আব্দুল ওয়াহেদের মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। খবর পেয়ে মান্দা থানা-পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। তবে বিকেল ৩টার দিকে শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে প্রধান শিক্ষক পদত্যাগ করেন।
কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেন, পরিচয়পত্র, অভ্যন্তরীণ পরীক্ষা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও বিভিন্ন অনাবশ্যক খাত দেখিয়ে নিয়মিত ভাবে আমাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করা হতো। আবার অভ্যন্তরীণ পরীক্ষায় ফেল করলে ২০০ টাকা করে জরিমানা আদায় করা হয়। প্রধান শিক্ষক নানা অজুহাতে টাকা নিয়ে আত্মসাৎ করেন।
জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক আব্দুল ওয়াহেদ বলেন, বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক নিয়মিত প্রাইভেট পড়ান। আমি গতকাল শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট না পড়াতে শিক্ষকদের নোটিশ দিই। আর তাতে গণিত বিষয়ের শিক্ষক জিয়াউল হক শিক্ষার্থীদের উস্কে দিয়ে এসব করিয়েছে। তিনি আরও বলেন, বিদ্যালয়ের প্রয়াত সভাপতি শাহাদত হোসেনের ইচ্ছা মতে অষ্টম শ্রেণির বাছাইকৃত ২৪ জন শিক্ষার্থীকে অতিরিক্ত ক্লাস করানো হয়। এ বিষয়ে ওই শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের নিয়ে মিটিং করে তাদের মতামতের ভিত্তিতে শিক্ষার্থী প্রতি মাসিক ১ হাজার টাকা ফি নেওয়া হচ্ছে। এছাড়া আমি কোন শিক্ষার্থীর কাছে থেকে অতিরিক্ত টাকা নেয়নি।
তিনি আরও বলেন, বাংলা বিষয়ের শিক্ষক আব্দুর রহমানের কাছে অর্ধ বার্ষিক পরীক্ষার ৪৯ হাজার ৬৫১ টাকা জমা আছে। সেখান থেকে ২৫ হাজার টাকা পরীক্ষার খাতা মূল্যায়ন করা বাবদ শিক্ষকদের সম্মানি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন এবং বাকি ২৪ হাজার ৬৫১ টাকা বিদ্যালয়ের ক্যাশে জামা দেওয়ার জন্য নির্দেশ। এরপর ১৭ আগস্ট শিক্ষকদের নিয়ে সাধারণ সভায় আলোচনান্তে জমা কৃত টাকা ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। সে টাকা জমা না দিয়ে আমার অফিস কক্ষে ঢুকে আমার সাথে অশালীন আচরণ করেন এবং আমার হাতে কবজী কেটে নেওয়ার হুমকি দেন। সে ঘটনায় আমি গত ৮ সেপ্টেম্বর তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিই। সে কারণে তিনিও শিক্ষার্থীদের উষ্কিয়ে দিয়ে আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে আমাকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করালেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষক জিয়াউল হক বলেন, আমি কোন কোচিং সেন্টারের সাথে জড়িত নয়। তবে আমি তো আমার জ্ঞান চর্চার জন্য বাসায় পড়াতে পারি। প্রধান শিক্ষককে পদত্যাগ করাতে তার কোন হাত নেই এবং পরীক্ষার খাতা মূল্যায়নের সম্মানি পাননি বলেও দাবি করেন তিনি।
এ বিষয়ে জানতে শিক্ষক আব্দুর রহমানের মুঠোফোনে কল দিলে তিনি রিসিভ করেননি। তাই তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
এ বিষয়ে মান্দা থানার অফিসার ইনচার্জ মনসুর রহমান বলেন, সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করি। এরপরও শিক্ষার্থীদের চাপের মুখে প্রধান শিক্ষক পদত্যাগ করেন। আমরা তাকে নিরাপদে সেখান থেকে সরিয়ে নিয়ে এসেছি।
মান্দা উপজেলা উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা শাহ আলম শেখ বলেন, আমি শুনেছি পরানপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পদত্যাগ করেছেন।