সুমন কুমার বুলেট নওগাঁ জেলা প্রতিনিধিঃ
নওগাঁ জেলার ঐতিহ্যবাহি রাণীনগর সরকারি পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আব্দুস সোবহান মৃধার বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতি, অর্থ-আত্মসাৎ ও স্বেচ্ছাচারিতাসহ নানা বিষয় তুলে ধরে সচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণ কার্যক্রম শুরু করেছে ছাত্র-শিক্ষক-জনতা ঐক্য পরিষদ। এছাড়াও শিক্ষার্থী অভিভাবক ও এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ এনে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগও দায়ের করা হয়েছে।
গতকাল সোমবার থেকে শুরু করা প্রচার মাইকের মাধ্যমে ব্যতিক্রমী লিফলেট বিতরণ কার্যক্রম মঙ্গলবারও অব্যাহত রয়েছে। এদিন সকালে স্কুলের আশেপাশের জনমুখর মোড়গুলো, কালীবাড়ি বাজার, বিএনপির মোড়সহ উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলোয় অবস্থানরত পথচারী, সাধারণ মানুষ ও অভিভাবকদের মাঝে এই লিফলেট বিতরণ করা হয়। যতদিন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হচ্ছে এবং নতুন যোগ্য প্রধান শিক্ষককে দায়িত্ব দিয়ে স্কুলের সুন্দর পাঠদানের পরিবেশ ফিরিয়ে আনার পদক্ষেপ গ্রহণ করা না হচ্ছে ততদিন বিভিন্ন কার্যক্রমের মাধ্যমে আন্দোলন অব্যাহত রাখা হবে বলে জানান ছাত্র-শিক্ষক-জনতা ঐক্য পরিষদের নেতৃবৃন্দ।
অভিযোগ সূত্রে জানা, ১৯৩৭সালে প্রতিষ্ঠিত স্কুলটি অত্র অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপিঠ। কিন্তু ধারাবাহিক ভাবে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকদের বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা, শিক্ষকদের অভ্যন্তরীণ গ্রুপিং ও দ্বন্দ্ব এবং রাজনৈতিক যাঁতাকলে পিষ্ঠ হয়ে পাঠদানের সুন্দর পরিবেশ নষ্ট হওয়ার মধ্য দিয়ে আজ বিদ্যাপিঠটি তার সুনাম হারিয়ে ফেলেছে। বছরের পর বছর চলে আসা এমন নানা অনৈতিক কর্মকান্ডের কারণে অভিভাবকরাও তাদের সন্তানদের স্কুলে ভর্তি না করিয়ে মুখ ফিরে নিচ্ছেন। ফলে এমন নাজেহাল অবস্থা থেকে আদর্শ বিদ্যাপিঠটিকে মুক্ত করতে উপজেলার সচেতন মহল নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। তারই ধারাবাহিকতায় লিফলেট বিতরণ কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। দিন দিন উপজেলার অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার মান বাড়লেও রাণীনগর সরকারি পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ে কমেছে। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের অনিয়ম-দুর্নীতি, অদক্ষতা, স্বেচ্ছাচারিতা ও অতিরিক্ত ফি আদায় করাসহ নানা অনিয়ম আর দুর্নীতিতে ক্ষুব্ধ অভিভাবক ও স্থানীয়রা।
এছাড়া গত ৫ আগষ্টের পর নানা কৌশলে বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের পদ বাগিয়ে নেন ইসলাম শিক্ষা বিষয়ের শিক্ষক আব্দুস সোবহান মৃধা। এরপর থেকে তার পছন্দমতো অন্যান্য শিক্ষকদের সহযোগিতায় তিনি জড়িয়ে পড়েন অনিয়ম-দুর্নীতি ও শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায়সহ অর্থ আত্মসাত ও নানা অপকর্মে। স্বেচ্ছাচারিতা ও অদক্ষতার কারণে বিদ্যালয়ের সরকারী, বেসরকারী উন্নয়নের বরাদ্দকৃত অর্থ যথাযথ ব্যবহার হচ্ছে না। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বেতন, সেশন ফি, ক্রীড়া ফি ও জরিমানা টাকা বিধি বহির্ভূতভাবে অধিকাংশ রশিদবিহীন আদায় করেন তিনি। সেশন ফি বিভিন্ন খাতওয়ারী অর্থ ব্যয় না করে গুটিকয়েক শিক্ষকদের সাথে নিয়ে নিজেই আত্মসাৎ করে চলেছেন। এছাড়া বিদ্যালয় চলাকালীন সময়ের অধিকাংশ সময় উপস্থিত না থাকাসহ তার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ উঠেছে।
ছাত্র-শিক্ষক-জনতা ঐক্য পরিষদের সদস্য ও অভিভাবক মাহমুদুর রহমান মধু, গোলাম মোস্তফা, পাভেল রহমানসহ অনেকেই বলেন, বছরের পর বছর ধরে এই বিদ্যালয়ে নিয়মিত ক্লাস হয় না। শিক্ষকরা নিজেদের ইচ্ছে মাফিক চলাচল করেন। ফলে স্কুলের শিক্ষার পরিবেশ ব্যাপকভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। যার কারণে শিক্ষার মান শূণ্যের কোঠায় চলে এসেছে। আগামীর আন্দোলনের কার্যক্রমগুলোয় সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের শতভাগ অংশগ্রহণ করার নিমিত্তে শিক্ষকের অনিয়ম-দুর্নীতিসহ বিভিন্ন অভিযোগ তুলে ধরে প্রচার মাইকের মাধ্যমে ব্যতিক্রমী এই সচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণ করছি। এছাড়া আমরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগও প্রদান করেছি। দ্রুত এসব অভিযোগের সুষ্ঠ তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ এবং বিদ্যালয়টিতে পাঠদানের সুন্দর পরিবেশ ফিরিয়ে না আনা হলে আগামীতে আরো কঠোর কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আব্দুস সোবহান মৃধা বলেন, আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগগুলো তুলে ধরা হচ্ছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যে, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন। একটি পক্ষ আমাকে সামাজিক ভাবে হেয় করতেই এমন কর্মকান্ড শুরু করেছে। আমি দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে যথা নিয়মে বিদ্যালয় চালিয়ে আসছি। এছাড়া অভিযোগে ভিত্তিতে আমার কাছে যে জবাব চাওয়া হয়েছিলো তা যথাযথ ভাবে প্রদান করেছি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও বিদ্যালয়টির সভাপতি মোহাইমেনা শারমীন বলেন, ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়ার পর তার কাছ থেকে লিখিত জবাব চাওয়া হয়েছে। আর তদন্তের জন্য তদন্ত কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া চলমান। তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।