মোঃ শামীম শাহরিয়ার (ব্যুরো চিফ রাজশাহী বিভাগ):
রাজশাহীর চারঘাট-বাঘায় তিন ফসলি জমি ও আম বাগান কেটে পুকুর খননের হিড়িক পড়েছে কয়েক বছর ধরে। জমি নষ্ট করে পুকুর খনন বন্ধে ভুক্তভোগী কৃষকরা সবসময় সোচ্চার থেকেছেন। জমি রক্ষায় তারা দফায় দফায় অভিযোগ দিয়েছেন উপজেলা ও জেলা প্রশাসনে। কিন্তু তাতে কোনো ফল হয়নি। ব্যতিক্রম দু’একটি ক্ষেত্রে লোক দেখানো অভিযান করে খননকারীদের জরিমানাতেই স্বীমাবদ্ধ প্রশাসন। কিন্তু দিনশেষে পুকুর খনন ঠেকানো যায়নি। প্রশাসনকে ম্যানেজ করে একপর্যায়ে পুকুর খনন সম্পন্ন হয়েছে। এখনো চলছে অব্যাহত ভাবে পুকুর খনন। প্রশাসনের ভুমিকা রহস্যজনক। কৃষি সমপ্রসারণ অধিদপ্তরের চারঘাট কৃষিবিদ আল মামুন হাসান বলেন, কৃষি জমিতে পুকুর খনন বন্ধে জেলা প্রশাসনের সভায় নিয়মিত কথা উত্থাপন হয়। কৃষি জমির শ্রেণি বদল করে পুকুর খনন পুরোপুরি বেআইনি। কিন্তু কেনোভাবেই পুকুর খনন বন্ধ হয়নি। ফলে কৃষি প্রধান এ অঞ্চলে দিনে দিনে কৃষি জমির পরিমান আশঙ্কাজনক ভাবে কমছে। ভুক্তভোগী কৃষকদের অভিযোগ, কোনো একটি এলাকায় পুকুর কাটা হলে তার আশপাশের কয়েকশ বিঘা কৃষি জমিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে জমি পরিত্যক্ত হয়ে যাচ্ছে। এতে প্রতিকুল প্রভাব পড়ছে পরিবেশে এবং ফসল উৎপাদন ও আম বাগান কমে যাচ্ছে।
স্থানীয় একাধিক ব্যাক্তি জানান, পুকুর খননে উপজেলা নির্বাহী অফিসার, এসিল্যান্ড থেকে শুরু করে থানা পুলিশ ও স্থানীয় প্রভাবশালীদের কাছে পুকুর খনন বন্ধের ব্যবস্থার জন্য গেলেও কাজের কাজ কিছুই হয় না। মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে অভিযোগকারীদের বিদায় করা হয়। পরে জানা যায় স্থানীয় প্রশাসন ও প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় চারঘাটে বাধাহিন ভাবে চলছে পুকুর খনন। শেষ পর্যন্ত পুকুর খনন আর বন্ধ হয় না, বরং একজনের দেখাদেখি অন্যরাও পুকুর খননে উৎসাহিত হচ্ছে। চারঘাট উপজেলাসহ আশেপাশের বিভিন্ন উপজেলায় পুকুর খননে গড়ে উঠেছে দালাল সিন্ডিকেট। এসব সিন্ডিকেট পুকুর খননকারী ও স্থানীয় প্রশাসন, পুলিশ ও প্রভাবশালীদের মাঝে লেনদেনের দরদাম ও বন্দোবস্ত করছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আল মামুন হাসান বলেন, গত কয়েক বছর ধরে চারঘাটে দিন দিন আবাদী জমি ও আম বাগানের পরিমান আশঙ্কা জনক ভাবে কমছে। এক সময় যে জমিতে আবাদ করা হতো ধান, গম,পাট আম বাগান চাষ সহ বিভিন্ন ধরণের ফসল। আজ সেখানে শুধুই পুকুর আর পুকুর। যে মাঠের দিকে তাকালে সবুজ ফসলে ছেয়ে থাকত কৃষকদের ফসল আর আম বাগান চাষ করে সারা দেশে রাজশাহীর আম বিখ্যাত প্রান জুড়ে যেত, সেখানে এখন তাকালে শুধুই চোখে পড়বে পুকুর।
তিনি বলেন, এ অঞ্চলে পুকুর খননের মৌসুম শুরু হয় নভেম্বর থেকে জুন-জুলাই-বর্ষা না আসার আগ পর্যন্ত। শুধু চারঘাটেই পুকুর খনন স্বীমাবদ্ধ নয়, আশে পাশের পুঠিয়া, দুর্গাপুর, বাঘা, ও বাগমারায় যেদিকে তাকানো যায়, চোখে পড়ে শুধু পুকুর আর পুকুর। যেখানে একসময় ফসলের সমারোহ দেখা যেত।
জানা গেছে, কৃষি জমি, খাল-বিল, নালা-ডোবার জমি নামমাত্র টাকায় ইজারা নিয়ে পুকুর খনন করছে প্রভাবশালী মহল। পুকুর খনন করে মাছ চাষের মাধ্যমে দ্রুতসময়ে অধিক মুনাফা লাভের আশায় স্থানীয় প্রভাবশালীরা যেমন পুকুর খননে ঝুঁকেছেন তেমনি জেলার বাইরের টাকাওয়ালা লোকজনও পুকুর খননে কোটি টাকা বিনিয়োগ করছেন। ফলে চারঘাটে পাট, গম, ধান আম বাগান চাষ কমেছে।
সরজমিনে চারঘাট উপজেলার নিমপাড়া ইউনিয়নের জোতকার্ত্তিক হিন্দুপাড়ায় গিয়ে দেখা যায়, কয়েকজন ব্যাক্তির তিন ফসলী সাড়ে ১১ বিঘা জমি লিজ নিয়েছেন বিএনপির কয়েকজন নেতা। সেখানে করা হবে পুকুর। ফলে পুকুর খনন বন্ধ করতে এলাকাবাসী ঐক্যবদ্ধ হয়ে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে। এরই মধ্যে গত দুই দিন আগে সেখানে শুরু হয়েছে পুকুর খনন। সেই পুকুর খননকে কেন্দ্র করে গত দুইদিন আগে দুপক্ষের মধ্যে ব্যাপক উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। তার পরেও সেখানে অবাধে চলছে অবৈধ ভাবে পুকুর খনন। পুকুর খননকে কেন্দ্র করে যে কোন সময় ঘটে যেতে পারে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ। এ দিকে জোতকার্ত্তিক হিন্দুপাড়ার পাশে নন্দনগাছী রেল লাইনের উত্তরে আরো একটি পুকুর খনন চলছে স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে। সেই পুকুর খনন বন্ধে স্থানীয়রা একাধিকবার স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগীতা কামনা করলেও ব্যবস্থা নেয়নি প্রশাসন। এদিকে চারঘাট সদর ইউনিয়নের তালবাড়িয়া, পাঁচবাড়িয়া, ভায়ালক্ষীপুর ইউনিয়ন সরদহ ইউনিয়ন , শলুয়া ইউনিয়ন ও নিমপাড়া ইউনিয়নের ফসল আম বাগান মাঠ জুড়ে খননকাজ অব্যাহত রেখেছেন অবৈধ ভাবে পুকুর খননকারীরা। এতে প্রশাসনের ভুমিকা এলাকাবাসীর কাছে প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, এসব এলাকায় দিনের পর দিন, মাসের পর মাস পুকুর খনন অব্যাহত থাকলেও প্রশাসনের নজরে থাকলেও প্রশাসন ব্যবস্থা না নেয়ায় অব্যাহত রয়েছে পুকুর খনন।
চারঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, আমি সবেমাত্র যোগদান করেছি। এখনও কোন অভিযোগ আমার চোখে পড়েনি। তবে এমন অভিযোগ ও অবৈধ ভাবে পুকুর খনন করলে আইনের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা হবে।
মো: শামীম শাহরিয়ার
ব্যুরো চিফ রাজশাহী বিভাগ
২০ জানুয়ারী/২০২৫ ইং, ০১৭৪৪৩১৫৩৮৬
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ সেলিম খান, নির্বাহী সম্পাদকঃ শেখ রবিউল ইসলাম আজম। যোগাযোগঃ ০১৮১১-২০২৫৩৩
বিঃদ্রঃ আমাদের সকল প্রতিনিধি নিজস্ব একাউন্ট থেকে স্বাধীনভাবে সংবাদ প্রকাশ করতে পারে, যে-কনো সংবাদের দায়ভার তারা নিজেরাই বহন করবে।