Tuesday, September 16, 2025
spot_img

নোটিসঃ আমাদের সকল প্রতিনিধি পার্সোনাল একাউন্ট থেকে নিউজ পাবলিশ করে থাকে, যে-কোনো সংবাদের দায়ভার তারা নিজেরাই বহন করবে।

Homeবাংলাদেশবয়স ৭০ বছর হলেও পায়নি বয়স্ক ভাতা,সংসার পরিচালনার একমাত্র উপায় ছাতু বিক্রি।

বয়স ৭০ বছর হলেও পায়নি বয়স্ক ভাতা,সংসার পরিচালনার একমাত্র উপায় ছাতু বিক্রি।

মামুন উর রশিদ রাসেল বিশেষ প্রতিনিধিঃ নীলফামারীর ডোমারে ছাতু বিক্রি করে সংসার চলে দিনেশ চন্দ্র কর্মকারের। সারাদিন পায়ে হেঁটে হাট বাজার থেকে শুরু করে বিভিন্ন গ্রামে গ্রামে ভাঁড় কাঁধে নিয়ে ফেরি করে বুটের ছাতু এবং ঐতিয্যবাহী তিলের খাজা বিক্রি করতে দেখা যায় দিনেশকে। দিনেশের দোকান বলতে তার একটি ভাঁড়। দুপাশে দুটি ডালি এবং স্থানীয় ভাষায় একখানা বাংকুয়া। আর সেই দোকানে রয়েছে এই এলাকার সুস্বাদু খাবার বুটের ছাতু ঐতিহ্যবাহী তিলের খাজা এবং মুরকি। এই দোকানের উপর সাত সদস্যের পরিবার চলে দিনেশের। হাতে বানানো বুটের ডালের ছাতু, তিলের খাজা ও গুড়ের মুড়কি বিক্রি করেই সংসার চালান তিনি। তার ছাতুর চাহিদা রয়েছে সর্বত্র। ডোমার উপজেলার সদর ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের ছোট রাউতা বড় ভুজারীপাড়া গ্রামের মৃত রমেশ চন্দ্র কর্মকারের ছেলে দিনেশ কর্মকার। বয়স ৭০ পেরিয়ে গেছে। ছোট বেলায় কলেরা রোগে আক্রান্ত হয়ে তার নাক বন্ধ হয়ে যায়। চেহারায় কিছুটা বিকৃতি ঘটে। ছোটবেলা থেকেই প্রতিদিন ছাতু, গুড়ের মুড়কি ও তিলের খাজা নিজ বাড়িতে তৈরি করে বেরিয়ে পড়েন গ্রামে গ্রামে। উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে তিনি বিক্রি করেন এসব পণ্য। ভেজালমুক্ত এসব খাবারের জন্য তার সুনাম রয়েছে এলাকা জুড়ে। সারাদিন এসব খাবার বিক্রি করে তার ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা আয় হয়। আর এই আয় দিয়েই চলে তার সংসার। বয়স বেড়েছে সেইসাথে শক্তি কমেছে শরীরে। তাইতো বেশি ভার বইবার সক্ষমতাও আর নেই। কষ্ট হলেও সংসারের খরচের চাপে এই ব্যবসা বাদ দিতে পারেন না। এভাবে ঘুরে ঘুরে ছাতু বিক্রি করেন। শারীরিক প্রতিবন্ধকতা এবং বয়স ৭০পেরোলেও পাননি প্রতিবন্ধী কিংবা ভয়স্কভাতার কোনো কার্ড। দিনেশ কর্মকার বলেন,বাবার কিছু জমি ছিল। অসুখে পরে সবকিছু বিক্রি করে দেন বাবা নিজেই। সে সময় খাজনা দিতে না পারায় কিছু জমি বন বিভাগ দখল করে নেয়। বর্তমানে বাড়ির ভিটে মাটি ছাড়া আর কোন জমি নাই। বাবা মারা যাওয়ার পর খুব অল্প বয়সে সংসারের দায়িত্ব পড়ে আমার উপর। তখন থেকেই কাঁধে ভাঁড় নিয়ে চলা শুরু। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ছাতু ছাড়াও গুড়ের মুড়কি ও তিলের খাজা বিক্রি করেন। গরমকালে ৫থেকে ৭কেজি বুটের ডালের ছাতু বিক্রি হয়। কিন্তু শীতকালে এর চাহিদা কম। প্রতিদিন দুই কেজি তিলের খাজা বিক্রি হয়। বিশেষ করে গুড়ের তৈরী তিলের খাজা খেতে খুবই সুস্বাদু। বর্তমান বাজারে সবকিছুর দাম বেড়ে যাওয়ায় এখন আর আগের মতো লাভ হয় না। আমার দোকানে যা রয়েছে তার সবটাই বাড়ীতে হাতে বানানো। বর্তমানে এক কেজি ছাতু ২৫০টাকা, চিনির তৈরী তিলের খাজা ৫০০টাকা এবং গুড়ের তৈরী তিলের খাজা ৭০০টাকা কেজি দরে বিক্রি করেন। তার বানানো ছাতু নীলফামারী জেলার অনেকে অর্ডার দিয়ে তৈরী করে নেন। তিনি আরো বলেন, আমি ও আমার স্ত্রী সন্ধা বালা এবং ছোট ছেলে দেবেন চন্দ্র কর্মকার মিলে যাতায় বুটের ছাল বের করে ছাতু তৈরি করে থাকি। হাতের তৈরি এসব ছাতু, মুড়কি ও তিলের খাজা তৈরি করতে অনেক কষ্ট হয়। অভাবের কারণে ছেলে মেয়েদের লেখাপড়া শেখাতে পারিনি। আমার বড় ছেলে মনিকান্ত কর্মকার ঝালমুড়ি ও আচার বিক্রি করে। মেঝ ছেলে প্রকাশ চন্দ্র কর্মকার কাঁচা তরকারির দোকান করে। আর ছোট ছেলে দেবেন শ্রমিকের পাশাপাশি আমার দোকানের কাজে আমাকে সহায়তা করে। এভাবেই দিনে মিলে দিনে খাই। ছাতু রক্তচাপ ও কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি শরীর ঠান্ডা রাখে।খেতে সুস্বাদু হওয়ায় বাচ্চাদের কাছে ছাতু খুবই জনপ্রিয়। ডোমার সদর ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের মেম্বার মহেশ চন্দ্র কর্মকার বলেন, বর্তমানে অনলাইনে আবেদন বন্ধ রয়েছে। অনলাইন খুললে তার নামে একটি বয়স্ক ভাতার কার্ড করে দেয়া হবে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments