মোঃ মমিনুল ইসলাম মুন বরেন্দ্র অঞ্চল প্রতিনিধি :
মাদক কারবারির কাছে হেরোইন বিক্রির একটি অডিও ফাঁস হওয়ার পরেও বহাল তবিয়তেই রয়েছেন রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) কনস্টেবলের মহাফুজুর রহমান। গত ২৫ এপ্রিল বিভিন্ন গনমাধ্যমে মাদক কারবারির কাছে তার হেরোইন বিক্রির তিন মিনিট ৩৩ সেকেন্ডের একটি কল রেকোর্ড ফাঁস হয়। একজন পুলিশ সদস্য হয়ে এতো বড় অপকর্মের পরেও ডিবি পুলিশেই বহাল তবিয়তে রয়েছে মাহফুজ। একজন উর্ধতন কর্মকর্তার অশ্রয়ে ও প্রশ্রয়ে তিনি ব্যপরোয়া হয়ে উঠেছে। এ জন্য এতো বড় অপকর্মের পরেও এখন পর্যন্ত তাকে বহাল তবিয়তে রাখা হয়েছে আরএমপি (ডিবি) পুলিশেই বলে জানা গেছে।
জানান গেছে, প্রায় তিনি বছর যাবত আরএমপি ডিবি পুলিশে কর্মরত আছেন পুলিশ সদস্য মাহফুজ। র্দীঘসময় কর্মরত থাকার সুযোগে মাদক কারবারিদের সাথে গড়ে তুলেছেন সখ্যতা। তার প্রশ্রয়ে কিছু মাদক কারবারি চালিয়ে যাচ্ছে মাদক ব্যবসা। বিনিময় তাদের কাছে থেকে মাসিক মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে থাকেন তিনি। এর মধ্যে রাজপাড়া থানার আইডি বাগানপাড়া এলাকার সাইদা ও জনের কাছে থেকে প্রতি মাসে ৫০ হাজার টাকা করে নিতেন মাহফুজ, এছাড়া ওই এলাকার মাদক ব্যবসায়ী রফিকুল কাছে থেকে নিতেন ৫ হাজার, বুবলবুলির কাছে থেকে নিতেন ১০ হাজার, স্বপনের কাছে থেকে নিতেন ৫ হাজার।
অভিযোগ রয়েছে, বেশ কিছু দিন আগে মহফুজ ও তার টিম নগরীর শ্রীরামপুর এলকা থেকে ৬০০ বোতল ফেনসিডিল আটক করে। এ ঘটনায় মামলাও হয়। ওই সব ফেনসিডিল পরে বিভিন্ন মাদক কারবারিদের মাধ্যমে ৫-১০ টা করে বিক্রি করেছেন। পরে খালি বোতলে পানি ভরে ফের মালখানায় রেখে দেন ওই সব ফেনসিডিলের সাথে। আটক কৃত ওই সব ফেনসিডিল চেক করলে তার প্রমান পাওয়া যাবে। এছাড়াও মাহফুজের বিরুদ্ধে আটককৃত একাধিক মাদক বিক্রির অভিযোগ রয়েছে। টাকার লোভে আটক বানিজ্য থেকে শুরু করে মাদক বিক্রিসহ একাধিক অপকর্মে জড়িতো মাহফুজ।
এছাড়াও অল্প সময় আরএমপি ডিবি পুলিশে কর্মরত অবস্থায় অবৈধ ভাবে বিপুলি পরিমান টাকার মালিক বুনে গেছে পুলিশ সদস্য মাহফুজ। রাজশাহী শহরে কিনেছেন ফ্লেট। এছাড়াও গড়ে তুলেছেন বিপুলি পরিমান সম্পদ। এতো কিছুর পরেও তিনি বহাল তবিয়তে রয়েছেন আরএমপি ডিবি পুলিশে। তার এমন কর্মকান্ডে বিব্রুত পুলিশের অন্যান কর্মকার্তারা। ডিবি পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তার সাথে রয়েছে তার ঘনিষ্ট সম্পর্ক। আর এ কারনে গুরুতর অভিযোগের পরেও বহাল তবিয়তে রয়েছেন তিনি।
পুলিশ সদস্য মাহফুজের মাদক বিক্রির ফাঁস হওয়া অডিও কল রেকর্ডে মাদক ব্যবসা করার প্রশ্রয় দিতে শোনা যাচ্ছে। ফাঁস হওয়া ওই অডিওর কপি গনমাধ্যমে ব্যপক ভাইরাল হয়ে পড়ে। এ ঘটনায় সংবাদ প্রকাশের পরেও তিনি বহাল তবিয়তে থেকে বিভিন্ন ভাবে গনমাধ্যম কর্মীদের ফাঁসানোর পরিকল্পনা করছেন বলে গোপন সূত্রে জানা গেছে।
উল্লেখ্য, দীর্ঘদিন থেকে উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নামে মাদক ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের মাসোয়ারা নেয়ার অভিযোগ রয়েছে ডিবি পুলিশের কনস্টেবল মাহফুজ। ওই পুলিশ সদস্য আরএমপি ডিবি পুলিশে দীর্ঘদিন যাবৎ কর্মরত থাকার কারণে বিভিন্ন অপকর্মে জড়িয়ে পড়েছেন বলেও অভিযোগ আছে।সাম্প্রতি কনস্টেবল মাহফুজ ফোন করে কথা বলেন একাধিক মাদক মামলার আসামী চিহিৃত মাদক কারবারি নগরীর রাজপাড়া থানার বাঁকির মোড় এলাকার সেলিমের স্ত্রী উম্মে খাতুনের সঙ্গে। তার সঙ্গে কথপোকথনের অডিওতে তাকে বলতে শোনা যায়, ‘‘ওই ভাবি ৩ গ্রাম জিনিস আছে নিবেন নিবেন, অপর দিকে নারী মাদক কারবারি বলছেন, জিসিন দিয়ে আবার ধরবেন নাতো আমাকে, আর মাহফুজ বলছে, আরে না, ধরবো না। আপনার ছেলে বিভিন্ন মানুষের কাছে আমার সম্পর্কে উল্টাপাল্টা কথা বলে বেড়ায়। কোন সমস্যা নাই। ওই জিনিস নিবেন, নিলে দিয়ে দিবো।
বিষয়টি জানতে যোগাযোগ করা হলে উম্মে খাতুনের ছেলে সম্রাট বলেন, ডিবি পুলিশের মাহফুজ দিন দফায় তাদের কাছে হেরোইন বিক্রি করেছে। যে অডিও ফাঁস হয়েছে তাতে ৩ গ্রাম হেরোইন বিক্রি জন্য ফোন করেছিল। এর আগে তিনি ১৪ গ্রাম হেরোইন বিক্রি করেন। এছাড়াও তিনি নিজে ১৫০০ থেকে ১৮০০ টাকা রেটে ফেনসিডিলও বিক্রি করেন বলে দাবি করেন সম্রাট।
তবে হেরোইন বিক্রির বিষয়টি অস্বীকার করে ফাঁস হওয়া অডিও কণ্ঠ তার নয় বলে দাবি করেন কনস্টেবল মাহফুজ। তিনি বলেন, ‘এ বিষয়টি ডিসি স্যার জানেন। আমার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ সঠিক না।
অভিযোগ রয়েছে, কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে নিজের বদলী আটকে রেখে দীর্ঘদিন যাবৎ ডিবি পুলিশেই কর্মরত রয়েছেন মাহফুজ। এ কারনে বিভিন্ন মাদক স্পর্ট থেকে মাসোয়ারাসহ মাদক কারবারিদের সাথে সখ্যতা গড়ে উঠেছে তার।
এ বিষয় আরএমপি ডিবি পুলিশের এডিসি ড. রুহুল আমিন বলেন, বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্ত করে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ সেলিম খান, নির্বাহী সম্পাদকঃ শেখ রবিউল ইসলাম আজম। যোগাযোগঃ ০১৮১১-২০২৫৩৩
বিঃদ্রঃ আমাদের সকল প্রতিনিধি নিজস্ব একাউন্ট থেকে স্বাধীনভাবে সংবাদ প্রকাশ করতে পারে, যে-কনো সংবাদের দায়ভার তারা নিজেরাই বহন করবে।