ভোলাহাটে ফসলি জমিতে মাটি কাটার মহা উৎসব নীরব ভূমিকায় প্রশাসন
ক্রাইম রিপোর্টার মোঃ ইয়াকুব আলী ভোলাহাট থেকে।।
ফসলি জমি দেশের কৃষি এবং খাদ্য নিরাপত্তার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। মাটি কাটার কারণে জমির উর্বরতা নষ্ট হয় এবং পরিবেশগত বিপর্যয় দেখা দেয়। ভোলাহাট প্রশাসনের নাকের ডগায় চলছে, ফসলি জমির মাটি কেটে পুকুর খননের মহোৎসব।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ- ভোলাহাট উপজেলার বিভিন্ন যায়গায় ফসলি জমির মাটি কাটার মহোৎসব চলছে রমরমা। এতে জমি ফসল উৎপাদনের উপযোগিতা হারানোর পাশাপাশি নষ্ট হচ্ছে গ্রামীণ সড়ক। ট্রলি, ড্রাম ট্রাকে বহন করা মাটি সড়কের ওপরে পড়ে থাকছে। মাটি পড়ে বিটুমিন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। সড়কে পিচ উঠে সৃষ্টি হয়েছে খানাখন্দ।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় প্রকাশ্যে এই কাজ চালিয়ে যাচ্ছে ভোলাহাট ২নং গোয়ালবাড়ি ইউনিয়নের- নামো কানারহাট মুন্সিগঞ্জ গ্রামের মৃত রাজ্জাক এর ছেলে মোঃ ফুয়াদ আলি”খালি আলমিপুর গ্রামের মোঃ আশরাফুল সহ আরও জডিত অনেকেই। নিরব ভূমিকায় পালন করছে প্রশাসন। প্রশাসনের নাকের ডগায় এসব ঘটলেও দেখার যেন কেউ নেই। এ নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে ক্ষোভ থাকলেও মাটিখেকোরা প্রভাবশালী হওয়াই ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছে না। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়,পোলাডাঙ্গা ভাওয়া ছোট বিল ও সোনাজল ভুরকুল্লা বিলসহ বিভিন্ন এলাকায় প্রকাশ্যে দিনে ও রাতে মাটিখেকোরা ফসলি জমির মাটি এক্সকেভেটর-ভেকু(JCP) দিয়ে কৃষি জমি থেকে ১৫-১৬ ফুট গভীর করে মাটি খাড়াভাবে কেটে পুকুর খননের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে ভোলাহাট ০২ নং গোলবাড়ি ইউনিয়নের আওয়ামীলীগ পন্থী মোঃ ফুয়াদ এবং খালি আলমিপুর গ্রামের মোঃ আশরাফুল এর নেতৃত্বে এই মাটিকাটা চলছে বলে জানায় ইউনিয়নবাসী।
আওয়ামীলীগ পন্থীরা বর্তমান পেক্ষাপটে প্রকাশ্যে কোন ক্ষমতাবলে মাটি বাণিজ্য করছে আর তার পেছনে কোন অদৃশ্য শক্তি রয়েছে এই নিয়ে স্থানীয় এলাকাবাসীর মধ্যে চলছে নানা সমালোচনা। অভিযোগ রয়েছে, সংশ্লিষ্ট উপজেলা প্রশাসনের নাম ভাঙিয়ে একটি চক্র এসব মাটিখেকোদের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নিয়ে মাটি বাণিজ্য করার সুযোগ করে দিচ্ছে।
এদিকে মাটি ব্যবসায়ীদের অবৈধ কর্মকাণ্ডে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকাবাসীরা জানায়,বিগত আওয়ামীলীগ সরকারের সময় থেকেই মোঃ ফুয়াদ এবং মোঃ আশরাফুল এর নেতৃত্বে মাটি বিক্রির সিন্ডিকেট চক্রটির ভয়ে এলাকার জনগণ কিছু বলতে সাহস পেত না। বর্তমানে মোঃ ফুয়াদ এবং মোঃ আশরাফুল স্থানীয় প্রশাসনের ছত্রছায়ায় মাটি বাণিজ্য করছে।
অনুমোদন বিহীন অবৈধ ট্রলি ও ড্রাম ট্রাকে করে মাটি বহনের ফলে রাস্তা নষ্ট হচ্ছে। প্রশাসনের লোকজন এ বিষয়ে কোনো খোঁজখবর নেয় না।
স্থানীয় এক ব্যক্তি জানান,আপনাদের এগুলো জিজ্ঞাসা করে কি হবে- প্রশাসন চাইলে এমনিই বন্ধ করতে পারে। কিন্তু তারা এগুলো বন্ধ করবে না। মাটি কাটার সাথে জড়িত মোঃ ফুয়াদ বলেন,আমি মৌখিক ভাবে পুকুর খনন করার জন্য অনুমতি নিয়েছি, তার কাছে জানতে চাওয়া হয় কে মৌখিক অনুমতি দিলো এর কোন উত্তর দিতে পারেননি তবে বলেন আমার ভাই বিভাগীয় অফিসার। খালি আলমিপুর গ্রামের মোঃ আশরাফুল বলেন,মাটিকাটা বিষয়ে কারো কাছ থেকে কোন অনুমোদন নেইনি। দলদলি ইউনিয়নের কৃষকরা বলেন, মাটি কাটার ফলে কৃষি জমিসহ এলাকার রাস্তা ঘাটের অনেক ক্ষতি হচ্ছে। এ বিষয়ে ভোলাহাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে কিন্তু তিনি কোন পদক্ষেপ নিচ্ছেন না।
জমির উর্বরতা শক্তি- ওপর থেকে ১৫-২০ ইঞ্চির মধ্যে থাকে। এই অংশে নাইট্রোজেন, ফসফরাস,পটাশিয়াম,ম্যাগনেশিয়াম, ক্যালসিয়ামসহ বিভিন্ন উপাদান থাকে। এই উপাদানগুলো ফসলের গুণগত মান বাড়ায়,ডাল ও ফসলের ফলন বাড়ায়, শস্যের দানা পুষ্ট করে এবং উদ্ভিদের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায়। তাই ওপর থেকে মাটি সরিয়ে ফেলায় উর্বরতা শক্তি নষ্ট হয়ে যায়। এভাবে মাটি খনন/বিক্রি অব্যাহত থাকলে একসময় ফসল উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। ভোলাহাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, এ বিষয়ে আমি অবগত না- জানানোর ৪৮ ঘণ্টা পার হলেও কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেন নাই।(সরেজমিন প্রতিবেদন)