সুমন কুমার বুলেট নওগাঁ জেলা প্রতিনিধিঃ
নওগাঁর মহাদেবপুরে একটি গভীর নলকূপের অপারেটর প্রতিপক্ষের ভোট করার জের ধরে ওই গভীর নলকূপটি জোর করে জবর দখলের চেষ্টার অভিযোগ করা হয়েছে। এনিয়ে আওয়ামী লীগের দুপক্ষ এক অপরের মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছে। এক পক্ষে আছেন সফাপুর ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি নুরুজ্জামান বাচ্চু ও ১নং সহ সভাপতি শহিদুল ইসলাম এবং অপর পক্ষে আছেন ২নং সহ-সভাপতি আব্দুস সাত্তার মেম্বার, ৩নং সহ-সভাপতি মাসুদ রানা টুটুল প্রমুখ। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এখানে রাজনৈতিক কোন বিষয় জড়িত নয়। একশ্রেণির অতিউৎসাহী কর্মী বিষয়টিকে ভিন্নখাতে প্রবাহের চেষ্টা করছে। উপজেলার সফাপুর ইউনিয়নের ঈশ্বরলক্ষ্মীপুর গ্রামের আব্দুল জলিলের ছেলে শহিদুল ইসলাম অভিযোগ করেন যে, বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বিএমডিএ তাকে গত ২০২২ সালের ২৪ জানুয়ারি ঈশ্বরলক্ষ্মীপুর গভীর নলকূপের অপারেটর হিসেবে নিয়োগ দেয়। সেই থেকে তিনি সে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। কিন্তু গত ৩১ জানুয়ারি ওইগ্রামের মৃত আব্দুস সামাদের ছেলে আব্দুস সালাম, তার ছেলে মাসুদ রানা টুটুল, মৃত ছুনি সরদারের ছেলে আব্দুর রহিম, মৃত জরিপ উদ্দিনের ছেলে রফিকুল ইসলাম, মৃত খলিল উদ্দিনের ছেলে জাহাঙ্গীর আলম ওই গভীর নলকূপের ঘরের তালা ভেঙ্গে নিজেরা তার দখল নেয়। অপারেটর শহিদুল এব্যাপারে বিএমডিএ মহাদেবপুর জোনের সহকারি প্রকৌশলী ও মহাদেবপুর থানায় লিখিত অভিযোগ দেন। এনিয়ে বিএমডিএ গত ৫ ফেব্রুয়ারি ও ১৪ ফেব্রুয়ারি বৈঠক করে শহিদুল ইসলামকেই অপারেটর বহাল রাখে। কিন্তু প্রতিপক্ষরা ওই গভীর নলকূপের দখল ছেড়ে না দিলে এব্যাপারে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি মহাদেবপুর থানায় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রতিপক্ষদেরকে তালা খুলে অপারেটরকে গভীর নলকূপের দখল বুঝে দিতে বলা হয়। পরদিন তালা খুলে দিলেও গত ২৯ ফেব্রুয়ারি আবার তালা লাগানো হয়। অপারেটর অপারেটর পক্ষ সে তালা ভেঙ্গে ফেললে রাতে আবার প্রতিপক্ষরা নতুন তালা লাগায়। সকালে অপারেটর পক্ষ আবার তা ভেঙ্গে ফেলেন। শুক্রবার (১ মার্চ) দুপুরে সরেজমিনে ওই এলাকায় গেলে অপারেটর শহিদুল ইসলাম জানান, গত নির্বাচনে তিনি ট্রাকের ভোট করেছেন এমন মিথ্যা অভিযোগ উত্থাপন করে তাকে আর অপারেটর রাখা হবে না বলে ঘোষণা দিয়ে প্রতিপক্ষরা তাকে দফায় দফায় নাজেহাল করছেন। এনিয়ে গ্রামে একাধিকবার বৈঠক হয়েছে। কিন্তু প্রতিপক্ষরা প্রত্যেক বৈঠকে হেরে গেলেও আবার বিভিন্ন কৌশলে তার গভীর নলকূপ জবর দখলের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। জানতে চাইলে ভিডিও ক্যামেরার সামনে প্রতিপক্ষ আব্দুস সালাম জানান, শহিদুল ইসলাম ঈশ্বরলক্ষ্মীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নৈশ প্রহরী পদে কর্মরত। তাকে অবৈধভাবে ওই গভীর নলকূপের অপারেটর নিয়োগ দেয়া হয়েছে। গত নির্বাচনের সময় শহিদুল ও তার লোকেরা নৌকার প্রার্থী সম্পর্কে নানান কটুক্তি ও গালিগালাজ করেছেন। একারণে তাকে আর অপারেটর রাখা হবেনা। ইউপি সদস্য আব্দুস সাত্তার জানান, এলাকায় শান্তি বজায় রাখার জন্য তিনি ওই গভীর নলকূপের ঘরে তালা লাগিয়েছিলেন। তবে আর লাগানো হবেনা। এবিষয়ে ওইগ্রামে বৈঠক করেছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা গত দুইবার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে নৌকার প্রার্থী ও এবার উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে সম্ভাব্য চেয়ারম্যান প্রার্থী মহাদেবপুর কৃষি ও কারিগরী কলেজের অধ্যক্ষ ময়নুল ইসলাম। তিনি বলেন, এটির সাথে রাজনৈতিক কোন বিষয় জড়িত নয়। একশ্রেণির অতিউৎসাহী কর্মী বিষয়টিকে ভিন্নখাতে প্রবাহের চেষ্টা করছেন। বরং ওই অপারেটরকে ঠিক রেখেই গভীর নলকূপটি পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বিএমডিএ মহাদেবপুর জোনের সহকারি প্রকৌশলী এমদাদুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, গভীর নলকূপ নিয়ে রাজনীতি করার কোন সুযোগ নেই। শহিদুল ইসলাম অপারেটর হিসেবেই থাকবেন। তবে উভয় গ্রুপের ৫ জন করে মোট ১০ সদস্যের কমিটি এটি পরিচালনা করবে। সফাপুর ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি নুরুজ্জামান বাচ্চু জানান, তিনি নিজে এবং অন্য ৯ জন সদস্য মিলে গভীর নলকূপটি পরিচালনা করবেন বলে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। তবে ভবিষ্যতে আর যেন কোন ঝামেলা না হয় সে বিষয়ে তিনি সকলের সহযোগিতা কামনা করেন। মহাদেবপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) রুহুল আমিন জানান, ওই গভীর নলকূপের ঘরে তালা দেয়া সংক্রান্ত বিষয়ে থানার কোন জিডিই এন্ট্রি করা হয়নি। এটি বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বিএমডিএ এর বিষয়। তারা নিজেরাই বিষয়টি মিমাংশা করে নিয়েছেন।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ সেলিম খান, নির্বাহী সম্পাদকঃ শেখ রবিউল ইসলাম আজম। যোগাযোগঃ ০১৮১১-২০২৫৩৩
বিঃদ্রঃ আমাদের সকল প্রতিনিধি নিজস্ব একাউন্ট থেকে স্বাধীনভাবে সংবাদ প্রকাশ করতে পারে, যে-কনো সংবাদের দায়ভার তারা নিজেরাই বহন করবে।