সুমন কুমার ঘোষ বুলেট নওগাঁ জেলা প্রতিনিধিঃ অজ্ঞতা, অবহেলা আর অনিয়মের কারণে নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলায় ভেস্তে যেতে বসেছে কৃষি বিভাগের প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় সমবায়ভিত্তিক কৃষি যান্ত্রিকীকরণ সমলয় চাষাবাদ। অনিয়মের কারণে এখানে বিভিন্ন জাতের ধানের চারা রোপণ করায় এক জাতের আগে অন্য জাতের ধান পেকে গেছে। যন্ত্রের পরিবর্তে চাষিরা এগুলো কাটছেন নিজ হাতে। ফলে যান্ত্রিকীকরণের মূল লক্ষ্যই ব্যাহত হচ্ছে। গচ্চা যেতে বসেছে প্রদর্শনীর জন্য বরাদ্দ করা মোটা অঙ্কের টাকা। তবে কর্তৃপক্ষ বলছেন আগেই ধান পাকা ও কাটার বিষয়ে কৃষকরা তাদের কিছু জানাননি। চলতি বোরো মৌসুমে সরকার দেশের ৬১ জেলায় ১১০টি সমলয় চাষাবাদের প্রদর্শনী স্থাপনের জন্য ১৫ কোটি সাত লাখ ৫৫ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়। এর মধ্যে মহাদেবপুর উপজেলায় বরাদ্দ হয় প্রায় ১৩ লাখ ৭০ হাজার ৫০০ টাকা। উপজেলার সদর ইউনিয়নের বকাপুর মাঠে ৫০ জন চাষির ৫০ একর জমি নিয়ে তৈরি করা হয় প্রদর্শনী খেত। নিয়ম অনুযায়ী একর প্রতি দুই কেজি করে হাইব্রিড জাতের ধানের বীজ কিনে ট্রে তৈরি করে সেখানে বীজ বপণ করা হয়। কিন্তু নিম্নমানের বীজ ব্যবহার করায় অর্ধেক চারা নষ্ট হয়। ফলে রাইস ট্রান্সপ্লান্টারের সাহায্যে প্রদর্শনীর অর্ধেক খেতে রোপণ করতেই চারাগুলো শেষ হয়ে যায়। এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোমরেজ আলী জানান, কুয়াশায় ট্রেতে তৈরি করা বীজতলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কিন্তু বাকি জমির চারা একই জাতের না হওয়ায় এবং তা রাইস ট্রান্সপ্লান্টারের সাহায্যে রোপণ না করায় প্রদর্শনীর মূল লক্ষ্যই ব্যাহত হচ্ছে কিনা তা তিনি জানাতে পারেননি। বরং মাঠের ধান পেকে গেলে চাষিরা সে খবর কৃষি কর্মকর্তাকে না জানিয়ে সাংবাদিকদের কেন জানালেন তা নিয়ে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এতে কোন অনিয়ম হয়নি বলেও তিনি দাবি করেন। নওগাঁ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবুল কালাম আজাদও অর্ধেক জমির ধান আগেই পেকে যাওয়ার কথা জানেন না বলে জানান। তাকে জানানো হলে সেগুলো যন্ত্র দিয়ে কেটে দিতেন বলেও জানান তিনি। প্রদর্শনী খেতে কীটনাশক প্রয়োগের জন্য কোনো বরাদ্দ নেই বলে সে ব্যাপারে তাদের কিছুই করার ছিল না। তবে ফলন বিপর্যয় হবে না বলে দাবি করেন আবুল কালাম আজাদ। তবে চাষিদের দলনেতা বকাপুর গ্রামের চাষি মিঠু মণ্ডল, সদস্য চাষি আবু হোসেন, জাহাঙ্গীর আলম, মেছের আলী, জহুরুল হক, আব্দুল হামিদ, সুনিল কুমার ও ভোলা অভিযোগ করে বলেন, বাকী অর্ধেক জমির মালিকরা নিজের টাকায় স্থানীয় জাতের ধানের চারা কিনে নিজেরাই রোপণ করেন। বীজ কেনার জন্য একর প্রতি এক হাজার ৫৬০ টাকা, বীজতলা তৈরির জন্য দুই হাজার টাকা, বীজতলা পরিচর্যার জন্য দুই হাজার, আর রাইস ট্রান্সপ্লান্টারের সাহায্যে রোপণের জন্য তিন হাজার টাকা করে বরাদ্দ থাকলেও তাদের তা দেওয়া হয়নি। সরকারি টাকায় কেনা সার বিতরণেও তালিকা মানা হয়নি। ৫০ জন কৃষকের অনেকেই সার পাননি। এখানে কৃষি বিভাগের সার্বক্ষণিক সহযোগিতার মাধ্যমে সেক্স ফরোমন ফাঁদ ব্যবহার, লাইভ পার্চিং, আলোক ফাঁদ, জৈব বালাই ব্যবস্থাপনা, গুঁটি ইউরিয়ার ব্যবহার, জৈব সার ব্যবহার কোনোটিই হয়নি। ফলে ধানে আক্রমণ হয়েছে একের পর এক পোকার। বাজার থেকে একের পর এক কীটনাশক কিনে প্রয়োগ করেছেন কৃষক। কিন্তু পোকার আক্রমণ ঠেকাতে পারেননি পুরোপুরি। পুরো খেতের স্থানে স্থানে পোকার আক্রমণে নষ্ট হয়েছে ধানের শীষ। প্রদর্শনীতে কীটনাশক প্রয়োগের জন্য কোনো বরাদ্দ রাখা না হলেও চাষিদের নিজ তহবিল থেকে একর প্রতি আট থেকে নয় হাজার টাকার কীটনাশক প্রয়োগ করতে হয়েছে। কৃষি বিভাগের তৈরি বীজতলা থেকে রোপণ করা হাইব্রিড জাতের ধানের চেয়ে অনেক আগেই কৃষকদের কেনা স্থানীয় জাতের অর্ধেক জমির ধান পেকে যায়। কিন্তু কৃষি অফিসের কেউ যোগাযোগ না করায় গত সপ্তাহে চাষিরা নিজেরাই সেসব জমির ধান কেটে আনা শুরু করেন। ফসল কাটার জন্য একর প্রতি চার হাজার ৫০০ টাকা করে বরাদ্দ থাকলেও তা থেকে তারা বঞ্চিত হয়েছেন।
Enter
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ সেলিম খান, নির্বাহী সম্পাদকঃ শেখ রবিউল ইসলাম আজম। যোগাযোগঃ ০১৮১১-২০২৫৩৩
বিঃদ্রঃ আমাদের সকল প্রতিনিধি নিজস্ব একাউন্ট থেকে স্বাধীনভাবে সংবাদ প্রকাশ করতে পারে, যে-কনো সংবাদের দায়ভার তারা নিজেরাই বহন করবে।