সুমন কুমার বুলেট নওগাঁ জেলা প্রতিনিধিঃ
নওগাঁর মহাদেবপুরে দেড় মাসেও গৃহবধূ রিনা বেগম (৪৩) হত্যা রহস্য পুলিশ উদঘাটন করতে পারেনি। ধরা পড়েনি হত্যাকারীরা। এনিয়ে এলাকার গৃহবধূরা দারুন আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। বিশেষ করে যেসব নারী একা বাড়িতে থাকেন, তারা রয়েছেন ভীতসন্ত্রস্ত্র। পুলিশ বলছে, তারা হত্যা রহস্য উদঘাটনে সবরকম চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। গত ২৫ জানুয়ারি দিবাগত রাত ১০টায় মহাদেবপুর থানা পুলিশ উপজেলা সদর সংলগ্ন খাজুর ইউনিয়নের কুঞ্জবন মাস্টার পাড়ায় নিজ বাড়ির শোবার ঘরের মেঝে থেকে রিনা বেগমের হাত-পা পিঠমোড়া করে বাঁধা ও মুখ বাঁধা মৃতদেহ উদ্ধার করে। কিন্তু গত দেড় মাসেও তার হত্যা রহস্য উদঘাটন না হওয়ায় এলাকায় নানান গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। তার হত্যাকান্ড ধামাচাপা দেয়ার অপচেষ্টা চলছে কিনা তা নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যেই পুলিশ নিহত রিনার সাবেক স্বামী, একজন বিদ্যুৎ মিস্ত্রি ও একজন মাছ ব্যবসায়ীসহ কয়েকজনকে থানায় ডেকে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। কিন্তু হত্যা রহস্য উদঘাটন করতে সক্ষম হয়নি। সরেজমিনে এলাকার বিভিন্ন স্থানে গিয়ে সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলার সফাপুর এলাকার মৃত ইয়াদ আলীর মেয়ে রিনা বেগম কুঞ্জবন মাস্টারপাড়া এলাকায় তার নিজের কেনা জমির উপর দুই ইউনিটের একটি পাকা বাড়ি নির্মাণ করে একটি ইউনিটে তিনি নিজে এবং অপর ইউনিটে তার ছোট ভাই একরামুল ইসলাম, তার স্ত্রী ময়না বেগম ও সাত বছরের মেয়ে অরপাকে নিয়ে বসবাস করতেন। বাড়ির মূল দরজা ছিল একটিই। সাধারণত: ক্লুলেস হত্যা রহস্য উদঘাটনে লক্ষ্য রাখা হয় হত্যাকান্ডের পর বেনিফিসিয়ারি করা হচ্ছেন তার উপর। এক্ষেত্রে জানা যায়, রিনা বেগম মূলত: সুদের উপর টাকা লাগিয়ে তাদের কাছ থেকে প্রতিমাসে যে টাকা পেতেন তাই দিয়ে চলতো তার সংসার। কয়েকবার তিনি টাকা লাগিয়ে মার খেয়েছেন। সূত্র জানায়, কলোনীপাড়ার হাতেম আলী রিনা বেগমের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়ে ফেরৎ না দেয়ায় এনিয়ে প্রকাশ্যে বিরোধ হয়। তবে অনেকেই বলেছেন যে সেটা মিটে গেছে। এছাড়া আশরাফুল ইসলাম মুন নামে এক নেতা রিনার কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়ে ফেরৎ না দিয়েই বিদেশ চলে গেছেন। এনিয়ে কয়েকবার বৈঠক হয়েছে। কিন্তু রিনা বেগম সে টাকা ফেরৎ পাননি। মহাদেবপুর বাজারের শ্রী উজ্জল নামে এক জুতা ব্যবসায়ী তার কাছ থেকে দু’লাখ টাকা নিয়েছেন। প্রতিলাখে প্রতিমাসে ১০ হাজার টাকা করে সুদ দিতেন তিনি। এছাড়া মাছ ব্যবসায়ী, ইটের ভাটা প্রভৃতি ব্যবসায়ীদের কাছে তার টাকা লগ্নি করা ছিল। কার কাছে টাকা লগ্নি করা হবে তার সিদ্ধান্ত দিতেন রিনার ভাই একরামুল ইসলাম। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে প্রতিমাসে সুদের টাকাও তিনিই তুলে আনতেন। দু ভাইবোনের মধ্যে ছিল গভীর আন্তরিকতা। রিনা তার নিজের নামে কেনা ৫ শতক সম্পত্তির উপর বাড়ি নির্মাণ করার সময় অর্ধেকটা তার ভাইয়ের নামে লিখে দেন। কিন্তু প্রতিবেসীরা জানান, রিনা ও তার ভাইয়ের স্ত্রী ময়না বেগমের সাথে সাংসারিক বিষয় নিয়ে প্রায়ই ঝগড়া বিবাদ লেগে থাকতো। একটি অসমর্থিত সূত্র জানায়, হত্যাকান্ডের তিন দিন আগে রিনা বেগম দু’লাখ টাকা ব্যাংক থেকে তুলে আনেন। একটি এনজিওতে সুদের উপর তা লাগাতে চান। এনজিও মালিকরা প্রতিলাখে প্রতিমাসে দেড় হাজার টাকা সুদ দিতে চান। কিন্তু রিনা বেগম চান আড়াই হাজার টাকা। সে টাকা না লাগিয়ে তার কাছেই রেখে দেন। রিনা হত্যাকান্ডের পর দেখা যায় ঘরের আলমারির তালা ভাঙ্গা ও কাপড় চোপর তছনছ করা। কিন্তু রিনার ভাইয়ের দাবি বাড়ি থেকে কোন কিছু খোয়া যায়নি। রিনা যাদের কাছে টাকা লাগাতেন তাদের কাছ থেকে সই করা ব্যাংকের ফাঁকা চেক ও ফাঁকা স্ট্যাম্প নিয়ে রাখতেন। নগদ টাকা এবং সেসব চেক ও স্ট্যাম্প হাতিয়ে নেয়া হয়েছে বলে ধারনা করা হচ্ছে। কিন্তু কার কার কাছে রিনা কত টাকা লগ্নি করেছেন তা তার ভাই বলতে পারেননি। সুদের টাকাও তিনি তুলতেন না, বরং রিনা নিজেই তুললেন বলেও দাবি করেন তিনি। হত্যাকান্ডের পর প্রতিবেসীরা রিনার ঘরের মেঝেতে তিনটি চা খাওয়া কাপ পিরিচ দেখতে পেয়েছেন। এথেকে ধারনা করা হচ্ছে তিন জন অতিথি এসেছিলেন। কিন্তু রিনার ভাই বলছেন রিনার ঘরে সেদিন চাপাতা ছিলনা। অনেকেই বলছেন রিনা হয়তো বিস্কুট চাপাতা ইত্যাদি নিতে ঘরের বাইরেও বেরিয়েছিলেন। কিন্তু রিনার ভাই বলছেন রিনাই তিন দিনে তিন কাপ চা খেয়ে কাপ পরিস্কার না করেই মেঝেতে রেখেছেন। রিনার ভাই একরামুল ইসলাম জানান, তিনি একটি বেসরকারি কোম্পানীতে চাকরি করেন ও তার স্ত্রী একটি কিন্ডারগার্টেনে শিক্ষকতা করেন। প্রতিদিনের মত সেদিন সকালে তারা স্বামী স্ত্রী বাড়ি থেকে বের হন। তাদের মেয়ে বেশিরভাগ সময়ই ফুফু রিনার কাছে থাকতো। কিন্তু ঘটনার দিন স্কুল শেষে বিকেলে বাড়ি ফিরলেও সে রিনার ঘরে যায়নি। রাত ৮টায় তার স্ত্রী বাড়ি এসে রিনার ঘরের দরজা বন্ধ দেখতে পান। ডাকাডাকি করেও না খুললে তারা দরজা খুলে ঘরের মেঝেতে হাত-পা বাঁধা রিনার মরদেহ পড়ে থাকতে দেখেন। পরে থানা পুলিশে খবর দেন। সকালে বা বাড়ি ফিরেই তারা রিনার খবর কেন নেননি তা বলতে পারেননি। রিনা নি:সন্তান হওয়ায় তার মৃত্যুর পর এখন এই বাড়ির পুরোটাই পাবে তার ভাই একরামুল ও তার সন্তান। ২৫ বছর আগে রিনা বেগমের সাথে প্রেম করে বিয়ে করেন উপজেলা সদরের দশকলোনী পাড়ার মৃত লোকমান হোসেনের ছেলে কনফেকশনারী ব্যবসায়ী ফেরদৌস আলম। এরপর তিনি দুবাই চলে যান। সেখান থেকে স্ত্রী রিনার নামে টাকা পাঠান। ফিরে এসে দীর্ঘদিনেও তাদের কোন সন্তান না হওয়ায় ফেরদৌস তার এক বন্ধু মাহবুব আলমের স্ত্রী শারমিন সুলতানা সেলিনার সাথে প্রেম করে তাকে দ্বিতীয় বিয়ে করে ঢাকায় গিয়ে বসবাস শুরু করেন। সেখানে জিম ও জেরিন নামে তার দুসন্তানের জন্ম হয়। ২০১৪ সালে রিনার সাথে তার বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। সম্প্রতি দ্বিতীয় স্ত্রীর সাথে ফেরদৌসের বনিবনা না হলে স্ত্রী সেলিনা পত্নীতলা উপজেলা সদরে তার ভাইয়ের বাসায় চলে আসেন। এই সুযোগে ফেরদৌস আবার তার আগের স্ত্রী রিনার বাড়িতে আসা যাওয়া শুরু করেন। প্রায়ই তার দু মেয়েকে রিনার কাছে রেখে যান। তাদের আচরন দেখে অনেকেই বলাবলি করেন ফেরদৌস আবার রিনাকে বিয়ে করেছেন। কিন্তু ফেরদৌস তা অস্বীকার করেন। রিনার ছোট ব