যাবতজীবন সাজাপ্রাপ্ত ডাকাত অবশেষে ২০ বছর পলাতক থাকার পর র্যাব-৭ এর হাতে আটক
এম ডি বাবুল চট্রগ্রাম
গত ২৫ নভেম্বর ২০০৩ ইং তারিখ রাত আনুমানিক ০১:৩০ মিনিটের দিকে দুুর্ধর্ষ একদল ডাকাত চট্টগ্রাম জেলার হাটহাজারী এলাকার হাটহাজারী টু মোহাম্মদপুর গামী রাস্তায় অবস্থান নিয়ে সাধারণ লোকজনকে আটক করে তাদের হাত পা বেধে নির্যাতন ও অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে টাকা পয়সা ও অন্যান্য মূল্যবান জিনিসপত্র ছিনিয়ে নেয়ার প্রাক্কালে ভুক্তভোগী নিহত ভিকটিম জাহাঙ্গীর আলম অন্যান্যদের মত উক্ত রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিল। তখন উক্ত ডাকাত দল রাস্তা বøক দিয়ে ভিকটিম জাহাঙ্গীর আলমকে আটক করে তার সাথে থাকা টাকা পয়সা ও অন্যান্য জিনিসপত্র ছিনিয়ে নেওয়ার সময় ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে ভিকটিম জাহাঙ্গীর ডাকাত দলের সদস্যদের চিনে ফেলে এবং চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করে।
ভিকটিম জাহাঙ্গীর কর্তৃক ডাকাত দলের সদস্যদের চিনে ফেলার বিষয়টি আচঁ করতে পেরে ডাকাত দল কর্তৃক ভিকটিম জাহাঙ্গীর আলমের পায়ের উরুতে রাম দা দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর রক্তাক্ত জখম করে এবং শরীরের বিভিন্ন স্থানে ধারালো ছুরি দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে মারাত্মক ভাবে জখম করে আহত করে পালিয়ে যায়। এসময় ভিকটিম জাহাঙ্গীর আলমের চিৎকার চেঁচামেচি শুনে স্থানীয় লোকজন এগিয়ে এসে ভিকটিমকে মূমুর্ষ অবস্থায় এবং জনৈক মোঃ ফজল ড্রাইভারসহ ভুক্তভোগী আরো ৭/৮ জনকে হাত-পা বাধা ও আহত অবস্থায় দেখতে পায়। পরবর্তীতে স্থানীয় লোকজন ভিকটিম জাহাঙ্গীর আলমকে মূমুর্ষ অবস্থায় উদ্ধার করে হাটহাজারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এ নিয়ে গেলে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ভিকটিমকে উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করে। পরবর্তীতে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ভিকটিম জাহাঙ্গীর আলম মৃত্যু বরণ করেন।
উক্ত হত্যাকান্ডের ঘটনায় নিহত ভিকটিম জাহাঙ্গীর আলমের প্রতিবেশী মোঃ ফজল আহাম্মদ ড্রাইভার (ডাকাতির ঘটনার রাত্রে ডাকাতদের কবলে পড়া ৭/৮ জন ভিকটিমদের মধ্যে একজন) বাদী হয়ে গত ২৯ নভেম্বর ২০০৩ ইং তারিখ চট্টগ্রাম জেলার হাটহাজারী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন, যার মামলা নং- ২৯/১১/২০০৩ ইং, ধারা-৩০২/৩৪; পেনাল কোড- ১৮৬০।
মামলাটি রুজু হওয়ার পর ঐদিন রাতেই আসামী দিদারুল আলম প্রকাশ দিদার হাটহাজারী থানা পুলিশ কর্তৃক গ্রেফতার হয়। কিছুদিন জেল হাজতে থাকার পর আসামী দিদারুল আলম জামিনে মুক্তি নিয়ে বের হয়। এরপর সে নিয়মিত মামলার হাজিরা দিয়ে থাকে। পরবর্তী সময়ে আসামী দিদারুল আলম হাজিরা না দেয়ায় বিজ্ঞ আদালত কর্তৃক তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি হয় এবং গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি হওয়ার পর থেকে সে পলাতক হয়ে যায়।
গত ৩০ মে ২০২২ইং তারিখ বিজ্ঞ আদালত সমস্ত সাক্ষ্য-প্রমাণের উপর ভিত্তি করে এবং দীর্ঘ বিচার কার্য প্রক্রিয়া সম্পন্ন শেষে উক্ত নির্মম ও নৃশংস হত্যাকান্ডের ঘটনায় আসামী দিদারুল আলম প্রকাশ দিদারকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড ও বিশ হাজার টাকা অর্থদন্ড অনাদায়ে ০৬ মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ড প্রদান করেন। এবং ৩৯৪/৩৪ ধারায় ১০ বছরের সশ্রম কারাদন্ড ও বিশ হাজার টাকা অর্থদন্ডসহ বিজ্ঞ আদালত তার বিরুদ্ধে রায় ঘোষণা করেন।
উক্ত নির্মম ও নৃশংস হত্যা কান্ডের ঘটনায় বিজ্ঞ আদালত কর্তৃক রায় ঘোষণার পর হতে আসামী দিদারুল আলম প্রকাশ দিদারকে গ্রেফতারের লক্ষে র্যাব-৭, চট্টগ্রাম ব্যাপক গোয়েন্দা নজরদারী এবং ছায়াতদন্ত শুরু করে। এরই প্রেক্ষিতে র্যাব-৭, চট্টগ্রাম গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারে যে, বর্ণিত হত্যা মামলার যাবজ্জীবন কারাদন্ড প্রাপ্ত পলাতক আসামী দিদারুল আলম চট্টগ্রাম মহানগরীর ফিরিঙ্গী বাজার এলাকায় আত্মগোপনে আছেন। উক্ত তথ্যের ভিত্তিতে গত ১৬ মে ২০২৩ইং তারিখ আনুমানিক ৯:৪৫ মিনিটের দিকে উল্লেখিত এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে আসামী দিদারুল আলম প্রকাশ দিদার (৪৫), পিতা- মৃত সৈয়দ আহাম্মদ, সাং-ফটিকালতি, থানা- হাটহাজারী, জেলা- চট্টগ্রামকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। পরবর্তীতে উপস্থিত সাক্ষীদের সামনে আটককৃত আসামীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে, সে উল্লেখিত হত্যার ঘটনার সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত এবং উক্ত হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন কারাদন্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামী বলে স্বীকার করে। গ্রেফতারকৃত আসামীকে জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানা যায় সে আইন শৃংখলা বাহিনীর নিকট হতে গ্রেফতার এড়াতে দীর্ঘ ২০ বছর যাবৎ চট্টগ্রাম মহানগরীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপন করে ছিল।
উল্লেখ্য যে, সিডিএমএস পর্যালোচনা করে ধৃত আসামী দিদারুল আলম প্রকাশ দিদার এর বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম জেলার হাটহাজারী থানায় ডাকাতি, ডাকাতির প্রস্তুতি এবং মাদক সংক্রান্ত ০৩ টি মামলা পাওয়া যায়।
গ্রেফতারকৃত আসামীকে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নিমিত্তে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ সেলিম খান, নির্বাহী সম্পাদকঃ শেখ রবিউল ইসলাম আজম। যোগাযোগঃ ০১৮১১-২০২৫৩৩
বিঃদ্রঃ আমাদের সকল প্রতিনিধি নিজস্ব একাউন্ট থেকে স্বাধীনভাবে সংবাদ প্রকাশ করতে পারে, যে-কনো সংবাদের দায়ভার তারা নিজেরাই বহন করবে।