মোঃ নাজমুল ইসলাম, ঈশ্বরদী (পাবনা) সংবাদাতাঃ
শেখ হাসিনার ট্রেনে গুলি করা মামলার রায়ে ৫ বছর আগে ২০১৯ সালের ৩ জুলাই ফাঁসি, যাবজ্জীবন ও ১০ বছর মেয়াদে কারাদন্ডের আদেশ দেয়া হয়। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর গত ২৭ আগস্ট সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিজয়-৭১-এর (১১) আদালতের বিচারক এ এস এম আব্দুল মবিন ও বিচারক মো. মাহমুদ হাসান তালুকদারের যৌথ বেঞ্চ কারাবন্দি ঈশ্বরদী বিএনপি'র ৪৭ নেতাকর্মীর মধ্যে ৩০ জনকে জামিনের আদেশ দেন। এই আদেশের প্রেক্ষিতে সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর) সকালে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ১৮ জন এবং রবিবার (৮ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় পাবনা জেলা কারগার ১২ জন নেতা- কর্মী মুক্তিলাভ করেন।
রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারকার থেকে মুক্তি পাওয়া নেতাকর্মীরা হলেন-আমিনুল ইসলাম আমিন, ইসমাইল হোসেন, সেলিম আহমেদ, আনিছুর রহমান সেকম, নেফাউর রহমান রাজু, আজমল হোসেন ডাবলু, নুরুল ইসলাম আক্কেল, মোঃ রবি, বাবু, কল্লোল, তুহিন, আবদুল্লাহ আল মামুন, আব্দুল জব্বার, পলাশ, চাঁদ আলী, জামরুল, তুহিন বিন সিদ্দীক ও ফজলুর রহমান প্রামাণিক।
এর আগে রোববার পাবনা জেলা কারাগার থেকে ১২ জনকে মুক্তি দেওয়া হয়। তারা হলেন-যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আলাউদ্দিন বিশ্বাস, ইসলাম হোসেন জুয়েল, শামসুর রহমান শিমুয়া, আবুল কাশেম, শাহ আলম লিটন মাল, আজাদ হোসেন খোকন, এনামুল হক বিহারী এবং ১০ বছর করে সশ্রম কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আনোয়ার হোসেন জনি, আহমদ রিয়াজী রনো, বরকত আলী, ইঞ্জিনিয়ার মুক্তার হোসেন ও হাফিজুর রহমান মুকুল।
জেলা বিএনপি'র আহব্বায়ক ও চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিবের নেতৃত্বে সহস্রাধিক বিএনপি'র নেতা-কর্মী শোভাযাত্রা করে কারামুক্তদের নিয়ে আসেন পাবনা জেলা বিএনপি কার্যালয়ে।
গতকাল সোমবার রাজশাহী কারাগার থেকে কারামুক্ত হয়ে ১৮ নেতাকর্মীকে মুলাডুলিতে সংবর্ধনা দেয়া হয়। এসময় হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন, যে ঘটনায় বিএনপি'র নেতা- কর্মীদের ষড়যন্ত্রমূলকভাবে মামলা ও সাজা দেওয়া হয়েছিল পৃথিবীর ইতিহাসে এমন জঘণ্যতম সাজা কেউ দেয়নি। পৃথিবী যতদিন টিকে থাকবে এধরণের ঘটনায় এমন সাজা কেউ দিবে না। ঘটনার সময় ওই ট্রেনে আমি ছিলাম জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ওই ট্রেনে অবস্থানকারী তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রীর জীবনহানির মতো কোন ঘটনা ঘটেনি।
কেউই আহত হয়নি, এমনকি কারও গায়ে এক টুকরো কাঁচের আঘাত লাগেনি।
মামলায় যাদের আসামী করে সাজা দেওয়া হয়েছিল, তাদের অনেকেই ওইদিন কি ঘটনা ঘটেছিল তা জানতো না। অথচ এই মামলার ফরমায়েশি রায়ে ৯ জনকে ফাঁসি, ২৫ জনের যাবজ্জীবন কারাদন্ড এবং ১৩ জনকে ১০ বছরের সশ্রম কারাদন্ড দেওয়া হয়। ৫টি বছর ধরে জেলাখানায় এসব নেতা-কর্মী নির্যাতিত হওয়ার সাথে সাথে পরিবারগুলো চরম দূর্ভেগের মধ্যে দিন কাটিয়েছে। যেকারণে শেখ হাসিনার যেভাবে পতন হয়েছে, এমন ঘটনাও পৃথিবীর ইতিহাসে নেই। পতন না হলে আমরা এদের কারামুক্ত করতে পারতাম না। এজন্য তিনি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে আরও বলেন, তিনি প্রথম দিন থেকেই এই পরিবারগুলোকে সাহায্য- সহযোগীতার পাশাপাশি মামলা-মোকাদ্দমা দেখভাল করেছেন। যেকারণে হাইকোর্টে জামিন পেতে কারও একটি টাকাও খরচ করতে হয়নি।সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জেলার সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট মাকসুদুর রহমান মাসুদ। পরে কারামুক্ত নেতাদের নিয়ে ঈশ্বরদীতে আনন্দ মিছিল বের করা হয়। দীর্ঘদিন পর কারামুক্ত নেতাকর্মীদের একনজর দেখার জন্য বিভিন্ন মোড় সরগরম হয়ে উঠে। কারামুক্তদের পরিবারে আনন্দের বণ্যা বয়ে যায়।
সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট জামিল আক্তার এলাহী জানান, ত্রিশ বছর আগে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বহনকারী ট্রেনে হামলা ও গুলিবর্ষণের মামলায় ২০১৯ সালের ৩ জুলাই চাঞ্চল্যকর ও বহুল আলোচিত ফরমায়েশি রায় দেন পাবনার অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালত-১-এর বিচারক রস্তম আলী। ফরমায়েশি রায়ে স্থানীয় বিএনপি'র মোট ৫২ জন নেতাকর্মীর মধ্যে বিচার চলাকালীন ৪ জন এবং রায়ের পর কারাগারে মারা গেছেন ৩ জন। শারীরিক অসুস্থতার কারণে ২ জন জামিনে মুক্ত রয়েছেন। এদের মধ্যে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ১০ বছর সাজাপ্রাপ্ত ১২ জন ও যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ১৮ জনকে জামিন দেন আদালত। মামলা চলাকালীন ও কারাগারে বন্দি অবস্থায় মৃত্যু বরণকারীদের মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ সেলিম খান, নির্বাহী সম্পাদকঃ শেখ রবিউল ইসলাম আজম। যোগাযোগঃ ০১৮১১-২০২৫৩৩
বিঃদ্রঃ আমাদের সকল প্রতিনিধি নিজস্ব একাউন্ট থেকে স্বাধীনভাবে সংবাদ প্রকাশ করতে পারে, যে-কনো সংবাদের দায়ভার তারা নিজেরাই বহন করবে।