মোঃ মাছুম আহমদ জুড়ী,প্রতিনিধিঃ
বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ (বিউবো) কুলাউড়া দপ্তরের অধীনে জুড়ী আবাসিক কার্যালয়ের সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে গত মে মাসে যোগদান করেছেন সেই দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা কবির আহমেদ। তিনি বিদ্যুৎ বিভাগের একজন দুর্নীতিবাজ শাস্তি পাওয়া কর্মকর্তা। যোগদানের পর থেকে নানা অনিয়ম-দুর্নীতির সাথে জড়িয়ে পড়েছেন তিনি। এখানে তিনি এক ভাড়া বাসায় থেকে বাড়তি বিদ্যুৎ সুবিধা নিচ্ছেন বলে অভিযোগ। যে বাসায় কখনো বিদ্যুৎ যায় না। এরআগে প্রায় ৯বছর পূর্বে তিনি কুলাউড়া বিদ্যুৎ দপ্তরে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির দায়ে চট্টগ্রামে বদলী হন। তাঁর বিরুদ্ধে বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষের নিয়ম ব্যতিরকে অবৈধভাবে খুঁটি স্থাপনসহ গ্রাহকের অবৈধ সংযোগ থেকে বৈধ সংযোগ করে দেবার অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে বিদ্যুৎ বিভাগের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের তদন্তে তাকে দোষী সাব্যস্ত করে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়। সেই তদন্ত প্রতিবেদনের একটি কপি এই প্রতিবেদকের সংগ্রহে রয়েছে।
সহকারী প্রকৌশলী কবির আহমেদ বর্তমানে জুড়ীর জায়ফরনগর ইউনিয়নের বাসিন্দা মনু মিয়ার বাসায় বসবাস করেন। গত ২ আগস্ট মনু মিয়ার বাসায় গিয়ে দেখা যায় কবির আহমদের বাসার কয়েকটি মিটার লাইনের সংযোগ দিয়ে রেখেছেন। শহরে লোডশেডিং হলেও ওই বাসায় প্রকৌশলী কবির আহমদ থাকেন বলে কখনই বিদ্যুৎ যায় না। বিদ্যুৎ বিভাগের বড়কর্তা বলে অবৈধ ভাবে সুযোগ সুবিধা তিনি ইচ্ছামাফিক ভোগ করছেন। দেখা যায় সার্ভিস তার মিটারের ইনকামিং অবৈধভাবে দুটি ফিডারের এলটি লাইন দুটিই কাটাউট এর মাধ্যমে সংযুক্ত করে বিদ্যুৎ ব্যবহার করতেছেন। বাসার মালিক মনু মিয়া বলেন, শহরে লোডশেডিং হলেও আমার বাসায় ১৫ দিন ধরে বিদ্যুৎ যায় না। কারন এখানে বিদ্যুৎ অফিসের বড়কর্তা কবির আহমেদ থাকেন।
এদিকে গত জুলাই মাসে জায়ফরনগর ইউনিয়নের বেলাগাঁও গ্রামের মোঃ ফরিদ মিয়া (যার মিটার নং- ১০২১০৮২৩১৫৮), জুড়ী শহরের ভবানীগঞ্জ বাজারে শুরা মিয়া, উত্তর ভবানীপুর মোকামটিলায় দুলাল মিয়া নামের গ্রাহকের অবৈধ সংযোগ ছিল। সহকারী প্রকৌশলী কবির আহমেদ সেই অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে বিদ্যুৎ লাইনে ব্যবহৃত মালামাল উদ্ধার না করে ওই তিন ব্যক্তির বিরুদ্ধে কোন মামলা কিংবা জরিমানা না করে উল্টো তাদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০১৪ সালে বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ (বিউবো) কুলাউড়া দপ্তরের সাবেক ইলেকট্রিশিয়ান আবু রায়হান, ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী প্রকৌশলী স্বাগত সরকার, উপ-সহকারী প্রকৌশলী সৈয়দ সিরাজুল হক, উপ-সহকারী প্রকৌশলী কবির আহমেদ, নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আব্দুল কাদির, সহকারী প্রকৌশলী হেলাল মোঃ আফজাল, দেলোওয়ার হোসেন হাওলাদার, নির্বাহী প্রকৌশলী কে কে রায়ের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ একটি তদন্ত করা হয়। অভিযোগ নাম্বার হলো- (৫২/২০১৩-২০১৪, ৬৭/২০১১-২০১২)। তদন্ত কমিটি তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পেয়ে তাদেরকে দোষী সাব্যস্ত করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিবেদন জমা দেন।
২০১৪ সালের ১৫ এপ্রিল বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ (বিউবো) ঢাকার নিরাপত্তা ও অনুসন্ধান পরিদপ্তরের সিনিয়র সহকারী পরিচালক (অনুসন্ধান) মোঃ মাসুদ উয জামান স্বাক্ষরিত এক পত্রে কবির আহমদের বিরুদ্ধে ছয়টি গুরুতর অভিযোগের দায়ে বিতরণ সিলেট অঞ্চলের বাইরে যে দপ্তর রাজস্ব আদায় ও বৈদ্যুতিক সংযোগ প্রদানের সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত নয় এমন কোন দপ্তরে বদলীপূর্বক পদস্থ করার সুপারিশ করা হয়। পরবর্তীতে অনিয়ম ও দুর্নীতির দায়ে কুলাউড়া-জুড়ী থেকে চট্টগ্রামে বদলী হন কবির আহমদ। এরপর সেখান থেকে বেশ কয়েক বছর চাকুরী করে সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশনে উপ-সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে যোগদান করেন। সেখান থেকে সিলেট ডিভিশন-৪ এ বদলী হয়ে সেখানকার নির্বাহী প্রকৌশলীর কাছে অনুরোধ করে ছাতকে বদলী হন। ছাতকে কয়েক বছর চাকুরী করে গত মে মাসে জুড়ীতে আবার সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে যোগদান করেন। যোগদান করেই তিনি আবার অনিয়ম ও দুর্নীতি শুরু করেছেন।
কুলাউড়া বিদ্যুৎ দপ্তরের উপ-সহকারী প্রকৌশলী কবির আহমেদসহ আরেকজন উপ-সহকারী প্রকৌশলী ও দুইজন নির্বাহী প্রকৌশলী ইসলামগঞ্জ ফিডারের বেড়কুরি-খামাউরা থেকে কৃষ্ণপুর পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়াই নিয়মবহির্ভূতভাবে স্থানীয়ভাবে তৈরি সিমেন্ট দিয়ে ৩০টি খুঁটি ২ তারের নন-স্ট্যান্ডার্ড এলটি লাইন সম্প্রসারণপূর্বক দাপ্তরিক নিয়ম-নীতি লংঘন করে ৫ জন গ্রাহকের ১৫/২০ বছর পুরাতন বিদ্যুৎ সংযোগকে এ লাইনে স্থানান্তর করা হয় এবং ২ জন গ্রাহককে নতুন বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হয়। যারজন্য তাদেরকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ সেলিম খান, নির্বাহী সম্পাদকঃ শেখ রবিউল ইসলাম আজম। যোগাযোগঃ ০১৮১১-২০২৫৩৩
বিঃদ্রঃ আমাদের সকল প্রতিনিধি নিজস্ব একাউন্ট থেকে স্বাধীনভাবে সংবাদ প্রকাশ করতে পারে, যে-কনো সংবাদের দায়ভার তারা নিজেরাই বহন করবে।