ঘুর্নিঝড় মোখার ১৩ ই মে সকালের আপডেট
এম ডি বাবুল চট্রগ্রাম
দক্ষিণ মধ্য বঙ্গপোসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত তীব্র ঘূর্ণিঝড় মোখা কিছুটা উত্তর উত্তর পূর্ব দিকি অগ্রসর হয়েছে। এবং শক্তি বাড়িয়ে ক্যাটাগরি টপ ৩ ক্ষমতাসম্পন্ন ঘূর্ণিঝড়ে পরিনত হয়েছে। এটি আজ ১৩ ই মে ভোর ৫ টা বেজে ৩০ মিনিটে মংলা সমুদ্র বন্দর থেকে ৭৫০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছিলো। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ৭৮০ কিলোমিটার দক্ষিণ পশ্চিমে অবস্থান করছিলো। কক্সবাজার থেকে ৬৭৫কিলোমিটার দক্ষিণ পশ্চিমে অবস্থান করছিলো। এটি আরও জোরদার হয়ে উত্তর উত্তর পূর্ব দিকে অগ্রসর হতেপারে।
ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৭৬ কিলোমিটার এর ভেতরে বাতাসের একটানা গড় গতিবেগ ঘন্টায় ২০৫ কিলোমিটার যা দমকা ও ঝড়ো হাওয়া আকারে ২৪০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। সাগর ঐ স্থানে প্রচন্ড উত্তাল আছে। এটি আজ দুপুরের আগে ক্যাটাগরি ৪ শক্তিসম্পন্ন ঘূর্ণিঝড়ে পরিনত হতেপারে। এটি উপযুক্ত পরিবেশ পেলে প্রবল শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ে পরিনত হতেপারে।
সিস্টেম টি কিছুটা কাছাকাছি চলে আসায় উত্তর বঙ্গপোসাগর ধিরে ধিরে উত্তাল হতে শুরু করেছে। তবে কোন মাছ ধরা নৌকা ও ট্রলার যেন কোনভাবেই এইসময় গভীর সাগরে যাওয়ার জন্য বের না হয় তার জন্য বিশেষভাবে জানাচ্ছি।
তবে আজ রাত থেকে উত্তর বঙ্গপোসাগর বেশ উত্তাল প্রক্রিয়া শুরু হতেপারে। ও দেশের উপকূলীয় কিছু এলাকায় বজ্রবৃষ্টি হতেপারে দিনে ও রাতে।
গতিপথ : সিস্টেম টি প্রাথমিকভাবে উত্তর উত্তর পূর্ব দিকে অগ্রসর হতেপারে, এবং পরবর্তীতে উত্তর পূর্ব দিকে অগ্রসর হতেপারে।
শক্তিমত্তা : এটি ক্যাটাগরি ৪ বা ৫ ক্ষমতাসম্পন্ন ঘূর্ণিঝড়ে পরিনত হতেপারে। সুপার সাইক্লোন হবার সম্ভাবনা থেকে যায়।
ল্যান্ডফল/ আঘাত : এটি আগামী ১৪ ই মে দুপুরের পর থেকে কক্সবাজার থেকে টেকনাফ ও রাখাইন এর ভেতরে যেকোনো উপকূলে প্রবল শক্তি নিয়ে অতিক্রম করতেপারে। তবে আঘাত হানার স্থান পরিবর্তন হতেও পারে কিছুটা । বর্তমান সময় পর্যন্ত কক্সবাজার চট্টগ্রাম আরাকান ও এর পার্শ্ববর্তী উপকূল বেশি ঝুকিপূর্ণ।
( ঘূর্ণিঝড় মোখা অতিক্রম করার ২ দিন পর দেশের অনেক এলাকার উপর শক্তিশালী বৃষ্টিবলয় ঝুমুল আসতেপারে।
যাতে প্রচুর, কালবৈশাখী, বজ্রপাত ও শিলাবৃষ্টি থাকতেপারে।
বেশি আক্রান্ত স্থান, সিলেট, রংপুর, ময়মনসিংহ, ঢাকা ও রাজশাহী বিভাগের অনেক এলাকা।)
চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার উপকূল সবচেয়ে বেশি ঝুকিপূর্ণ। সাথে বরিশাল উপকূলীয় এলাকা গুলোও মোটামুটি ঝুকিপূর্ণ। সেইসঙ্গে রাখাইন উপকূল অনেক ঝুকিপূর্ণ।
ঘূর্ণিঝড় অতিক্রম কালে কক্সবাজার ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকায় ঘন্টায় ১৮০ থেকে ২২০ কিলোমিটার পর্যন্ত হাওয়া বয়ে যেতেপারে ও স্বাভাবিক জোয়ার থেকে ১৮ থেকে ২৫ ফুট উচু পর্যন্ত বায়ুতাড়িত জলোচ্ছ্বাসের সম্ভাবনা আছে।
চট্টগ্রাম ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকায় ঘন্টায় ১২০ থেকে ১৭০ কিলোমিটার পর্যন্ত বাতাস হতেপারে ও ১২ থেকে ১৮ ফুট উচ্চ জলোচ্ছ্বাস হতেপারে।
ফেণী ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকায় ঘন্টায় ১০০ থেকে ১৩০ কিলোমিটার পর্যন্ত বাতাস ও ৮ থেকে ১৫ ফুট উচ্চ জলোচ্ছ্বাস হতেপারে।
ভোলা ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকায় ৭০ থেকে ১০০ কিলোমিটার পর্যন্ত বাতাস ও ৬ থেকে ৮ ফুট উচ্চ জলোচ্ছ্বাস হতেপারে।
বরিশাল উপকূল ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকায় ঘন্টায় ৫০ তেকে ৯০ কিলোমিটার পর্যন্ত বাতাস ও ৫ থেকে ৬ ফুট উচ্চ জলোচ্ছ্বাস হতেপারে।
খুলনা উপকূল ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকায় ঘন্টায় ৪০ থেকে ৬০ কিলোমিটার বাতাস সহ ৪ থেকে ৫ ফুট উচ্চ জলোচ্ছ্বাস হতেপারে স্থানভেদে।
সতর্কতা : দেশের চট্টগ্রাম ও বরিশাল উপকূলে যারা আছেন তারা আগে থেকেই প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা নিয়ে রাখবেন। একটা কথা বলে রাখা ভালো, সেটা হলো অনেকে বলছে ঘূর্ণিঝড় টি সরাসরি বার্মায় আঘাত করবে, সো, চট্টগ্রাম সতর্কতা অবলম্বন করার দরকার নেই। আমি তাদের সাথে একমত নই। কারণ, চট্টগ্রাম এর কেউ সতর্ক হলোনা, কিন্তু ঘূর্ণিঝড় টি হটাৎ গতিপথ পরিবর্তন করে আমাদের আশঙ্কা অনুযায়ী চট্টগ্রাম আঘাত করলো তাহলে কি হবে?
যাহোক সতর্কতা গ্রহণ করলে বিপদ না আসলেও ক্ষতি হবেনা, কিন্তু সতর্ক হলাম না আর বিপদ হটাৎ চলে আসলো তাহলে তো মহা বিপদ। একটা ঘূর্ণিঝড় এর ডায়ামিটার অনেক বড় হয়, ফলাফল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্র থেকে কয়েকশত কিলোমিটার দুরের এলাকায়ও ব্যাপক ক্ষতি হতেপারে।
বৃষ্টিপাত : এর প্রভাবে আগামী ১৩ ই মে থেকে ১৬ ই মে এর ভেতরে,চট্টগ্রাম বিভাগের সকল এলাকা ও বরিশাল বিভাগের কিছু এলাকায় ভারি থেকে অতিভারি বর্ষণ হতেপারে। এইসকল এলাকায় গড়ে ১০০ থেকে ৩৫০ মিলিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টি হতেপেরে। এখানে রাজশাহী, রংপুর, ময়মনসিংহ বিভাগ ও খুলনা বিভাগ অঞ্চলে ঘূর্ণিঝড় এর বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই।
জলোচ্ছ্বাস : ঘূর্ণিঝড় মোখা সরাসরি দেশের দক্ষিণ চট্টগ্রাম বিভাগ উপকূলে আঘাত করলে, আঘাত করা স্থানে ১৮ থেকে ২২ ফুট উচ্চ বায়ুতাড়িত জলোচ্ছ্বাসে আক্রান্ত হতে পারে।
পাহাড়ধ্বস : ঘূর্ণিঝড় টি চট্টগ্রাম/কক্সবাজার আঘাত করলে, পার্বত্য চট্টগ্রামে ভয়াবহ পাহারধ্বস এর আশংকা করা যায়।
নোট : কক্সবাজার যেসব রোহিঙ্গা আছে তাদের জন্য ও অধিক সতর্ক হওয়া জরুরী, সেন্টমার্টিন দ্বীপ খালি করা উচিৎ সরকারের।
সতর্ক সংকেত : BMD, দেশের মংলা বাদে বাকি সমুদ্র বন্দরে ৮ আট নম্বর মহাবিপদ সংকেত বহাল রেখেছে, পরবর্তী সময়ে সংকেত বাড়তেপারে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার বন্দরে। মংলায় ৪ নাম্বার বহাল আছে।
কত কিলোমিটার বেগে আঘাত করবে : ঘূর্ণিঝড় মোখা ঘন্টায় ১৯০ থেকে ২৩০ কিলোমিটার বা তারচেয়ে অধিক গতিতে উপকূল অতিক্রম করতেপারে।
বৃষ্টি বলয় তুফান : ১৩ টু ১৫ ই মে, , চট্টগ্রাম বিভাগ সম্পুর্ন। ও বরিশাল বিভাগের উপকূল।