সুমন কুমার ঘোষ বুলেট নওগাঁ জেলাঃ নওগাঁর রাণীনগরের আতাইকুলা গ্রামের মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বহনকারী একমাত্র ঐতিহাসিক ৫২জন শহীদের বধ্যভূমিতে স্বাধীনতার ৫১বছর পার হলেও আজও উন্নয়নের কোন ছোঁয়া লাগেনি। ২০১৫সালে জারি করা প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া নির্দেশনা এখনোও বাস্তবায়ন না হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেছে শহীদ পরিবার ও সচেতনমহল।
বধ্যভূমিটি শহীদ পরিবারের সদস্যরা নিজেদের উদ্দ্যোগে কোন রকমে ইটের প্রাচীর দিয়ে ঘিরে রেখেছে মাত্র। বধ্যভূমিতে যাওয়ার একমাত্র ইট বিছানো রাস্তাটিরও বেহাল দশা। দীর্ঘদিন কোন সংস্কার কিংবা মেরামত না করায় রাস্তাটির এমন বেহাল দশা হয়েছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।
বধ্যভূমিটি সংরক্ষণ ও স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করে আগামীর প্রজন্মের কাছে নতুন করে তুলে ধরতে ৫২জন শহীদদের স্মৃতি রক্ষার্থে সকল জটিলতার অবসান ঘটিয়ে দ্রুত প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া নির্দেশনার বাস্তবায়ন চান শহীদ পরিবার ও স্থানীয়রা।
ওই দিনের নারকীয় ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়েও বেঁচে যাওয়া ও শহীদ পরিবারের সন্তান আতাইকুলা গ্রামের প্রদ্যুত পাল, সাধন চন্দ্র পাল ও নিখিল চন্দ্র পাল ওই দিনের করুন হত্যাযজ্ঞের কাহিনী অশ্রুসিক্ত নয়নে বর্ণনা করে বলেন, ১৯৭১ সালের ২৫ এপ্রিল রোজ রবিবার সকাল ১০টায় ছোট যমুনা নদী পার হয়ে আসে একদল হানাদার বাহিনী।
মুক্তিযোদ্ধারা এই গ্রামে আছে বলে তারা সন্দেহ করে প্রথমে গ্রামটিকে ঘিরে ফেলে প্রতিটি বাড়ী থেকে নগদ টাকা স্বর্নালংকাসহ বাড়ীর নারী পুরুষকে ধরে নিয়ে ওই গ্রামের বলরাম চন্দ্রের বাড়ীর উঠানে নিয়ে যায়। সেখানে পুরুষদের উঠানে সারিবদ্ধ করে দাঁড়িয়ে রাখে আর উঠানের পাশেই নারীদের এক ঘরে রাখে।
একের পর এক নারীদের উপরে চালায় পাশবিক নির্যাতন। পরে সারিবদ্ধ পুরুষদের উপরে চলে ব্রাশ ফায়ার। মুহুর্তের মধ্যেই ওই গ্রামের ৫২জন শহীদ হন। পরে তারা বিভিন্ন বাড়ীতে লুটপাটসহ অগ্নিসংযোগ করে চলে যায়। শহীদদের মধ্য থেকে গুলিবিদ্ধ হয়েও কোন রকমে বেঁচে যায় প্রদ্যুত পাল, সাধন পাল ও নিখিল পাল।
প্রদ্যুত পাল জানান, ওই দিন তার বাবা, কাকা জ্যাঠা এবং গ্রামের লোকজনের সাথে তাকেও সারিবদ্ধ করে চালায় ব্রাশ ফায়ার। মুহুর্তের মধ্যে প্রাণ হারায় ৫২ জন লোক। হানাদার বাহিনীরা চলে যাবার পর রক্তাক্ত ও গুলিবিদ্ধ অবস্থায় লাশের মধ্য থেকে কোন রকমে বেঁচে গিয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় সে তার বাড়ীতে যায়।
সাবেক সংসদ সদস্য শাহীন মনোয়ারা হক গত ১৯৯৬সালে নিজ উদ্যোগে কিছু অনুদান দিয়ে কোন রকমে ফলকে শহীদদের নাম লিপিবদ্ধ করার কাজ সম্পন্ন করেন। এরপর এখানে আর কোন কাজ হয়নি। তাই বধ্যভূমিটি পরে আছে অযত্ন আর অবহেলায়। বর্তমানে বধ্যভূমিটির মধ্যে জন্ম নিয়েছে আগাছা। চারপাশ দিয়ে গোবাদি পশু চারন করা হয়। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা প্রদানের পর সম্প্রতি এই বধ্যভূমিটি আধুনিকায়ন করার জন্য ভূমি অধিগ্রহনের জটিলতায় সেই নির্দেশনাটির সকল কার্যক্রম পুনরায় স্থবির হয়ে পড়েছে।
সাবেক উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার এ্যাড. ইসমাইল হোসেন বলেন অনেক চেষ্টার পর ২০১৫সালে প্রধামন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ৫২জন শহীদের আত্মদান স্মরনে বধ্যভ’মি সংরক্ষন, শহীদদের নাম সরকারি গেজেট অন্তর্ভূক্তি, স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের অর্থ বরাদ্দ ও শহীদদের অসহায় পরিবারকে মূল্যায়ন ও আর্থিক সাহায্য প্রদানের নির্দেশনা প্রদান করা হয়।
কিন্তু জমি অধিগ্রহনের সমস্যার কারণে এখন পর্যন্ত বধ্যভূমি সংরক্ষণ ও স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের কোন পদক্ষেপই গ্রহণ করেনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। ইতিমধ্যেই শহীদ পরিবারের সদস্যরা ৮শতাংশ জমি বধ্যভূমিতে দান করেছে। আশা রাখি দ্রুতই বধ্যভূমি সংরক্ষণ ও স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের কাজ শুরু করা হবে। আর আমাদের দীর্ঘদিনের দাবী পূরণ করা হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহাদাত হুসেইন বলেন আমি সম্প্রতি বধ্যভ’মিটি পরিদর্শন করেছি। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা এখন পর্যন্ত কেন বাস্তবায়ন হয়নি সেই বিষয়ে জেলা প্রশাসক স্যারের নির্দেশনা সাপেক্ষে এবং এই কাজের জড়িত সংশ্লিষ্ট সকল বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করে যেন আগামী বছরের মধ্যেই প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনাটি বাস্তবায়ন করা হয় সেই বিষয়ে দ্রুত কার্যক্রম শুরু করবো
নোটিসঃ আমাদের সকল প্রতিনিধি পার্সোনাল একাউন্ট থেকে নিউজ পাবলিশ করে থাকে, যে-কোনো সংবাদের দায়ভার তারা নিজেরাই বহন করবে।
অবেহলায় আর অযত্নে পড়ে আছে ৫২শহীদের আতাইকুলা বধ্যভূমি
RELATED ARTICLES