Wednesday, October 30, 2024

নোটিসঃ আমাদের সকল প্রতিনিধি পার্সোনাল একাউন্ট থেকে নিউজ পাবলিশ করে থাকে, যে-কোনো সংবাদের দায়ভার তারা নিজেরাই বহন করবে।

Home Uncategorized চট্টগ্রামের রাউজানে আলোচিত কলেজ ছাত্রকে অপহরণপূর্বক নৃশংস হত্যার দায়ে আটক ২

চট্টগ্রামের রাউজানে আলোচিত কলেজ ছাত্রকে অপহরণপূর্বক নৃশংস হত্যার দায়ে আটক ২

চট্টগ্রামের রাউজানে আলোচিত কলেজ ছাত্রকে অপহরণপূর্বক নৃশংস হত্যার দায়ে আটক ২

এম ডি বাবুল সি:বিশেষ প্রতিনিধি

পরিবারের বাড়তি আয়ের জন্য নিজের লেখাপড়ার পাশাপাশি নিহত ভিকটিম শিবলি সাদিক হৃদয় স্থানীয় রাউজান থানাধীন কদলপুর ইউপিস্থ সিকদার পাড়ার একটি মুরগী’র খামারে ম্যানেজার হিসেবে কাজ করতো। খামারের কাজ নিয়ে খামারে কর্মরত ৫/৭ জন অন্যান্য সহযোগী কর্মচারী বন্ধুদের সাথে ভিকটিম হৃদয়ের বিভিন্ন সময় বাক-বিতন্ডা হত। এ ব্যাপারে খামারের মালিকগণ তাদের মধ্যে মীমাংসা করে দিলেও তারা হৃদয়কে মেরে ফেলার পরিকল্পনা করে। উক্ত পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য আসামী উমংচিং মারমা গত ২৮ আগস্ট ২০২৩ইং তারিখ হৃদয়কে ফোন করে রাস্তায় আসতে বলে। তখন হৃদয় রাস্তায় আসলে আসামীরা জোর করে সিএনজিতে তুলে নেয়; এসময় ভিকটিম হৃদয় চিৎকার করলে মুখে গামছা বেধে রাঙ্গুনিয়ার একটি উঁচু পাহাড়ের সেগুন বাগানে নিয়ে যায়।

পরবর্তীতে উমংচিং মারমার ব্যবহৃত ফোন হৃদয়’কে দিয়ে তার বাবার নিকট ১৫ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। মুক্তিপণের টাকা নিয়ে দর কষাকষির একপর্যায়ে অপহরণকারীরা ২ লক্ষ টাকার বিনিময়ে অপহৃত ছেলেকে ফিরিয়ে দিতে রাজি হয়। গত ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৩ইং তারিখ হৃদয়ের বাবা ও নানা মুক্তিপণের ২ লক্ষ টাকা বান্দরবানে গিয়ে অপহণকারীদের দিলেও তারা ছেলেকে ফেরত দেয়নি। পরবর্তীতে ছেলেকে ফেরত না পেয়ে গত ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ইং তারিখ হৃদয়ের মা বাদী হয়ে চট্টগ্রাম জেলার রাউজান থানায় ০৬ জনের নাম উল্লেখ করে একটি অপহরণ মামলা দায়ের করেন। উক্ত মামলার প্রেক্ষিতে রাউজান থানা পুলিশ অপহরণের ঘটনায় দুজনকে গ্রেফতার করে বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করেন।

উল্লেখ্য, গ্রেফতারকৃত সুইচিংমং মারমা ও অংথুইমং মারমা আসামী উমংচিং মারমা এর নেতৃত্বে অপহরণ, হত্যা, আলামত ধ্বংস করার জন্য লাশগুম এবং মুক্তিপণ আদায় করে মর্মে চট্টগ্রামের বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এর ৩য় আদালতে স্বীকারোক্তি প্রদান করে। উল্লেখিত ঘটনাটি প্রাথমিকভাবে অপহরণ মামলা হিসেবে চট্টগ্রাম জেলার রাউজান থানায় রুজু করা হয়। পরবর্তীতে আদালতে দেয়া জবানবন্দী অনুযায়ী হৃদয়’কে হত্যার বিষয়টি উদঘাটিত হলে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কর্তৃক অপহরণ মামলার ধারার সাথে হত্যা মামলার ধারা সংযোজন করার জন্য বিজ্ঞ চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত, চট্টগ্রাম বরাবর আবদেন করেন।

উক্ত অপহরণ এবং হত্যা পরবর্তীতে লাশ বহু খন্ডিত করে গুম করা মামলার অবশিষ্ট আসামীদের গ্রেফতারের লক্ষ্যে র‌্যাব-৭, চট্টগ্রাম ব্যাপক গোয়েন্দা নজরধারী এবং ছায়াতদন্ত অব্যাহত রাখে। নজরধারীর এক পর্যায়ে র‌্যাব-৭, চট্টগ্রাম গোপন সূত্রে জানতে পারে যে, উক্ত নৃশংস হত্যা মামলার অন্যতম প্রধান এবং ভিকটিম’কে নৃশংসভাবে জবাইকারী আসামী চট্টগ্রামের পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত এলাকায় অবস্থান করছে। উক্ত তথ্যের ভিত্তিতে গত ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩ইং আনুমানিক ১৫০০ ঘটিকায় র‌্যাব-৭, চট্টগ্রামের একটি অভিযানিক দল বর্ণিত এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে আসামী ১। উচিংথোয়াই মারমা (২৩), পিতা-মংহ্লাজাই মারমা, সাং-কলমপতি, থানা-কাউখালী, জেলা-রাঙ্গামাটি’কে আটক করতে সক্ষম হয়। তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে উক্ত হত্যার সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত অপর আসামী ২। ক্যাসাই অং চৌধুরী (৩৬), পিতা-মৃত ক্য থোয়াই অং চৌধুরী, সাং-আশ্রম পাড়া, থানা-রুমা, জেলা-বান্দরবান’কে একই তারিখ আনুমানিক ১৭০০ ঘটিকায় চট্টগ্রামের কর্ণফুলী থানাধীন নতুন ব্রীজ এলাকা থেকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।

পরবর্তীতে উপস্থিত সাক্ষীদের সম্মুখে গ্রেফতারকৃত আসামী উচিংথোয়াই মারমা স্বীকার করে যে, সে নিজ হাতে ধারালো ছুরি দিয়ে হৃদয়কে জবাই করে শরীর থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন করে এবং অপর আসামী ক্যাসাই অং চৌধুরী হৃদয়ের দুই পা চেপে ধরে জবাই করতে সহযোগীতা করে। এছাড়াও গ্রেফতারকৃত আসামীদ্বয়’কে জিজ্ঞাসাবাদে নিম্নবর্ণিত নৃশংস ও চাঞ্চল্যকর তথ্য উদঘাটিত হয় ঃ

অপহরণ: খামারের বিভিন্ন বিষয়াদি নিয়ে হৃদয় ও তার অন্যান্য কর্মচারী বন্ধুদের মধ্যে কথা কাটাকাটির ব্যাপারে খামারের মালিকগণ মীমাংসা করে দিলেও হৃদয়কে শায়েস্তা করার জন্য আসামী উমংচিং মারমা ও অংথুইমং মারমা অপহরণের পরিকল্পণা করে। পরিকল্পণা মোতাবেক গত ২৮ আগস্ট ২০২৩ইং তারিখ উমংচিং মারমা মোবাইল ফোনে তার অপরাপর সহযোগীদের জানায় যে, খামারের ম্যানেজার হৃদয় তাদের সাথে ঝামেলা করছে বিধায় তাকে উচিৎ শিক্ষা দিতে হবে মর্মে তারা একত্রিত হয়ে রাত ২২০০ ঘটিকায় একটি সিএনজি যোগে কদলপুর এলাকায় মাজার গেইটে এসে উমংচিং মারমা ফোন করে হৃদয়কে রাস্তায় আসতে বলে। তার কথা মত হৃদয় রাস্তায় আসলে উমংচিং মারমাসহ অন্যান্যরা জোরপূর্বক সিএনজিতে তুলে গামছা দিয়ে মুখ বেধে হৃদয়’কে পূর্ব নির্ধারিত রাঙ্গুনিয়ার একটি উচু পাহাড়ের সেগুন বাগানে নিয়ে যায়।

হত্যা: অপহরণ পূর্বক হৃদয়কে রাঙ্গুনিয়ার একটি উঁচু পাহাড়ের সেগুন বাগানে নিয়ে গেলে সেখানে আসামী উচিংথোয়াই মারমা ও ক্যাসাই অং চৌধুরী পূর্ব থেকে উপস্থিত থাকে। পাহাড়ে হৃদয়কে একদিন অবরুদ্ধ রাখার পর উমংচিং মারমা অপরাপর আসামীদের বলে ‘‘হৃদয়’কে মেরে ফেললে কিছুই হবেনা’’। সে কথা মোতাবেক উমংচিং মারমা হৃদয়কে হত্যা করার জন্য উচিংথোয়াই মারমাকে দায়িত্ব দেয়। উচিংথোয়াই মারমা নিজ হাতে ধারালো ছুরি দিয়ে জবাই করে হৃদয়ের শরীর থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন করে ফেলে এবং ক্যাসাই অং চৌধুরীসহ অন্যান্য আসামীরা হৃদয়ের হাত-পা ও মুখ চেপে ধরে জবাই করতে সহযোগীতা করে।

লাশগুম: জবাই পরবর্তীতে হৃদয়ের লাশ প্রথমে পাহাড়ের চূড়ায় কলা পাতা দিয়ে ঢেকে রেখে দেয়। পরবর্তীতে আসামী উচিংথোয়াই মারমাসহ অন্যান্য খুনীরা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নিকট থেকে বাঁচতে হত্যাকান্ডের আলামত ধ্বংস করার জন্য হৃদয়ের লাশের শরীর থেকে মাংস কেটে আলাদা করে ফেলে দেয় এবং হাড়গোড় গহীন পাহাড়ের জঙ্গলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রেখে চলে আসে।

মুক্তিপণ: গত ২৮ আগস্ট ২০২৩ইং তারিখ হৃদয়’কে অপহরণের পর অবরুদ্ধ করে রেখে পরিবারের নিকট মুক্তিপণ দাবি করে। মুক্তিপণের টাকা পরিবার কর্তৃক দিতে রাজি হওয়া সত্তে¡ও গত ২৯ আগস্ট ২০২৩ইং তারিখ রাতে হৃদয়কে জবাই করে নির্মম ও নৃশংসভাবে হত্যা করে। হত্যার পর ফিরে এসে আসামী উমংচিং মারমা বন্ধু উচিংথোয়াই মারমা’র মোবাইলে সীম ঢুকিয়ে মুক্তিপণের টাকা নেওয়ার জন্য হৃদয়ের বাবাকে ফোন দেয়। ছেলেকে জীবিত ফিরে পাওয়ার আশায় হৃদয়ের বাবা ও নানা মিলে গত ১ সেপ্টেম্বর ২০২৩ইং তারিখে বান্দরবানে গিয়ে আসামী উচিংথোয়াই মারমাকে ২ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ প্রদান করে। মুক্তিপনের ২ লক্ষ টাকা গ্রহণ করে ভিকটিম হৃদয়কে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে এবং সে বাসায় ফিরে যাবে বলে তার বাবাকে জানায়। উল্লেখ্য, আসামী উচিংথোয়াই মারমা স্ব-শরীরে মুক্তিপণের টাকা গ্রহণ করায় ২ লক্ষ টাকার মধ্যে সে একাই ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা নেয় এবং অপরাপর আসামীদের ৫০ হাজার টাকা ভাগ করে দেয়।

ঘটনায় গ্রেফতারকৃত আসামীদের দেয়া জবানবন্দী থেকে জানা যায়, বর্ণিত অপহরণ পরবর্তীতে নৃশংস হত্যাকান্ডে উমংচিং মামরাসহ তার অপরাপর ৯ থেকে ১০ জন সহযোগী অংশগ্রহণ করে। এদের মধ্যে র‌্যাব কর্তৃক ২ জন এবং অন্যান্য আইন শৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক ৫ জনসহ মোট ৭ জন আসামীকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়েছে এবং অবশিষ্ট আসামীদের গ্রেফতারের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

গ্রেফতারকৃত আসামীদের সংক্রান্তে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের নিমিত্তে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হবে।

মোঃ বাবুল ্মিয়া
মোঃ বাবুল ্মিয়া
ভ্রাম্যমান প্রতিনিধি, চট্টগ্রাম জেলা। মোবাইলঃ ০১৮২১-৬৩৬২৩০
RELATED ARTICLES

রাজশাহীতে সাংবাদিকের উপর হামলা ও মামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন

সুমন কুমার বুলেট নওগাঁঃ সারা দেশের ন্যায় রাজশাহীতেও সাংবাদিকের উপর হামলা ও মামলার প্রতিবাদে মানববন্ধনের...

মহাদেবপুরে যুবদলের ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্পে তিনশ’ রোগীর চিকিৎসা

সুমন কুমার বুলেট নওগাঁ জেলা প্রতিনিধিঃ নওগাঁর মহাদেবপুরে যুবদলের ৪৬তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালন উপলক্ষে আয়োজিত...

মহাদেবপুরে যুবদলের ৪৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত

সুমন কুমার বুলেট নওগাঁ জেলা প্রতিনিধিঃ নওগাঁর মহাদেবপুরে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী যুবদলের ৪৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত হয়েছে।রোববার ...

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

রাজশাহীতে সাংবাদিকের উপর হামলা ও মামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন

সুমন কুমার বুলেট নওগাঁঃ সারা দেশের ন্যায় রাজশাহীতেও সাংবাদিকের উপর হামলা ও মামলার প্রতিবাদে মানববন্ধনের...

মহাদেবপুরে যুবদলের ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্পে তিনশ’ রোগীর চিকিৎসা

সুমন কুমার বুলেট নওগাঁ জেলা প্রতিনিধিঃ নওগাঁর মহাদেবপুরে যুবদলের ৪৬তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালন উপলক্ষে আয়োজিত...

মহাদেবপুরে যুবদলের ৪৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত

সুমন কুমার বুলেট নওগাঁ জেলা প্রতিনিধিঃ নওগাঁর মহাদেবপুরে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী যুবদলের ৪৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত হয়েছে।রোববার ...

নওগাঁ জেলার মহাদেবপুরে জামায়াতে ইসলামীরবিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত

সুমন কুমার বুলেট নওগাঁ জেলা প্রতিনিধিঃ নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার বাসস্ট্যান্ডে (মাছ চত্বর)বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নওগাঁ...

Recent Comments